বিজয় ও অঙ্গীকারের মাস ‘ডিসেম্বর’
> তোফায়েল আহমেদ
বছর ঘুরে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের অনেক স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করে ৩০ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে মহত্তর বিজয় অর্জন করেছিলাম। যে বাংলার স্বপ্ন সামনে নিয়ে দীর্ঘ ২৪টি বছর কঠিন সংগ্রাম পরিচালনা করে, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে, ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিব। কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বসে যে বাংলার ছবি তিনি হূদয় দিয়ে অঙ্কন করেছিলেন, ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ তাঁর স্বপ্নের আরাধ্য প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
আমার জীবনে ডিসেম্বর মাসটি আনন্দ-বেদনার স্মৃতিবিজড়িত। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হয়েছিলাম। ’৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু মুজিবের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের স্লোগান তুলেছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেদিন সমবেত জনতাকে আহ্বান করে বলেছিলেন, ‘আমার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে স্লোগান তুলুন—আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ ’৭০-এর নির্বাচনে ডিসেম্বরের ৭ তারিখে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬৭টি এবং ১৭ তারিখ প্রাদেশিক পরিষদের ২৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। ডিসেম্বরের প্রতিটি দিন আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ববহ।
মূলত, ৩ ডিসেম্বর থেকে সার্বিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ অর্জন করে। আমরা তখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। মুক্তিবাহিনীর চতুর্মুখী গেরিলা আক্রমণে বিধ্বস্ত পাকিস্তানি বাহিনী এ দিন একতরফাভাবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পাকিস্তান বিমানবাহিনী পশ্চিম ভারতের বিমানঘাঁটিগুলো এমনকি দিল্লির কাছে আগ্রার বিমানক্ষেত্র এবং পূর্ব ফ্রন্টের আগরতলা বিমানঘাঁটিতে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি ও ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী রাত ১০.৩০ মিনিটে সারা ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। রাত ১২.২০ মিনিটে ইন্দিরা গান্ধী এক বেতার ভাষণে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে সাফ জানিয়ে দেন, ‘আজ এই যুদ্ধ ভারতের যুদ্ধ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করল।’ পরদিন ৪ ডিসেম্বর, মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জনে চিঠি লেখেন। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, ‘যদি আমরা পরস্পর আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রবেশ করি, তবে পাকিস্তান সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ অবস্থান অধিকতর সহজতর হয়। অবিলম্বে ভারত সরকার আমাদের দেশ এবং আমাদের সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করুক।’ এর পরপরই ভারতও পাল্টা আক্রমণ চালায়। অতঃপর ৬ ডিসেম্বর, সোমবার, ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ভারত সরকার স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে গৃহীত রাষ্ট্রের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ উদ্ধৃত করে লোকসভার অধিবেশনে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘বাংলাদেশ “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামে অভিহিত হবে।’ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সব সদস্য দাঁড়িয়ে তুমুল হর্ষধ্বনির মাধ্যমে এই ঘোষণাকে অভিনন্দন জানান। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার ও জনসাধারণের ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।
৭ ডিসেম্বর ছিল মুজিবনগর সরকার ও মুজিববাহিনীর জন্য এক বিশেষ দিন। এ দিন মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চল যশোর হানাদারমুক্ত হয়। যশোরের সর্বত্র উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সেদিন মুজিবনগর সরকারের নেতারা ও মুজিববাহিনীর কমান্ডাররাসহ আমরা বিজয়ীর বেশে স্বাধীন বাংলাদেশে শত্রুমুক্ত প্রথম মুক্তাঞ্চল যশোরে প্রবেশ করি। জনসাধারণ আমাদের বিজয়মাল্যে ভূষিত করে। সে আনন্দ-অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আজ ভাবতে অবাক লাগে কত ষড়যন্ত্র, কত বিরোধিতা—সবকিছু সামাল দিয়ে মুজিবনগর সরকারের নেতারা অপূর্ব দক্ষতার সঙ্গে, দল-মত-শ্রেণীনির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে, আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে, সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে ২২ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। অনেকে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে মুজিববাহিনীর ভুল-বোঝাবুঝির কথা বলেন। এটা সঠিক নয়। আমাদের হেডকোয়ার্টার্স ছিল কলকাতা বেইজড। আমি নিয়মিত মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মনে পড়ে জেনারেল ওবানের কথা। তিনি দেরাদুনে আমাদের ট্রেনিং দিতেন। জেনারেল সরকার ও শ্রী ডি পি ধর, যাঁরা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে কো-অর্ডিনেট করতেন। এখানে কারও ব্যক্তিগত খামখেয়ালির কোনো অবকাশ ছিল না। সবাই ছিলেন সুসংগঠিত, পরিকল্পিত এবং সুশৃঙ্খল। সমগ্র বাংলাদেশকে চারটি বৃহৎ অঞ্চলে বিভক্ত করে রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সংগঠিত ছিল মুজিববাহিনী। প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর (এফএফ) সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করাই ছিল মূলত মুজিববাহিনীর কাজ। মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্বে ছিল পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী। শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের দায়িত্বে ছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম ডিভিশন। রাজ্জাক ভাইয়ের দায়িত্বে ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং সিরাজগঞ্জসহ এক বিরাট অঞ্চলের। উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। মুজিববাহিনীর ট্রেনিং হতো দেরাদুনে। দেরাদুন থেকে ট্রেনিং শেষ করে আমার সেক্টরের যারা, তাদের প্লেনে করে ব্যারাকপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসতাম। মুজিববাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের প্রাক্কালে অশ্রুসিক্ত চোখে বুকে টেনে, কপাল চুম্বন করে বিদায় জানাতাম। আমরা মুজিববাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্পে বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু মুজিবকে উদ্দেশ করে বলতাম, ‘প্রিয় নেতা, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো, জানি না! যতক্ষণ আমরা প্রিয় মাতৃভূমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশকে হানাদারমুক্ত করতে না পারব, ততক্ষণ আমরা মায়ের কোলে ফিরে যাব না।’ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর যেদিন বিজয়ী হলাম, সেদিন আমরা সত্যিই মায়ের কোলে ফিরে এলাম। ১৮ ডিসেম্বর আমি এবং শ্রদ্ধেয় নেতা আবদুর রাজ্জাক—আমরা দুই ভাই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আসি। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণ করি। চারদিকে সে কী আনন্দ, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না! প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শ্রদ্ধেয়া ভাবি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ রাসেলসহ যেখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারকে, সেখানে। কিন্তু বিজয়ের আনন্দ ছাপিয়ে কেবলই মনে পড়ছিল প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। দেশ স্বাধীন না হলে ডিসেম্বরেই বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হতো। কিন্তু আমরা জানতাম আমাদের নেতার ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় মনোবলের কথা। ১৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়ে বিজয় অর্জন করার পরও আমরা নিজেদের স্বাধীন ভাবতে পারিনি। কারণ, বঙ্গবন্ধু তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। আমরা পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হলাম, যেদিন ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি বুকভরা আনন্দ আর স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে জাতির পিতা তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন।
ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানিদের দোসর এ দেশীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনীর ঘাতকেরা। ডিসেম্বর মহান বিজয়ের গৌরবমণ্ডিত মাস হলেও ১৪ ডিসেম্বর আমাদের বেদনার দিন। মনে পড়ে নির্ভীক সাংবাদিক শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনের কথা, যাঁর কাছে আমি ঋণী। ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে যিনি আমাকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। মনে পড়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দীন আহমদ, আনোয়ার পাশা, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. আবুল খায়েরসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কথা। জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে ঘাতকেরা আমাদের মেধাহীন জাতিতে পরিণত করতে চেয়েছিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা দিনগুলোতে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল স্বাধীনতার সূত্রে। জাতীয় ঐক্যের অভূতপূর্ব নিদর্শন ছিল সেই দিনগুলো। ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-কৃষক-শ্রমিক-যুবক সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণে সফল গণযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি সুমহান বিজয়। আর এখানেই নিহিত আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক সাফল্য। স্বাধীনতার ডাক দিয়ে একটি নিরস্ত্র জাতিকে তিনি সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। আমরা সেদিন স্লোগান দিয়েছি—‘জাগো জাগো, বাঙালি জাগো’, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জয় বাংলা’ ইত্যাদি। সেদিন কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিষ্টান এসব প্রশ্ন ছিল অবান্তর। আমাদের মূল স্লোগান ছিল ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি’। আমাদের পরিচয় ছিল ‘আমরা সবাই বাঙালি’।
ভাবতে অবাক লাগে, পাকিস্তানের কারাগার বঙ্গবন্ধুকে আটকে রাখতে পারেনি; মৃত্যুদণ্ড দিয়েও কার্যকর করতে পারেনি। অথচ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পরাজিত শক্তির দোসর খুনি মোশতাক-রশীদ-ফারুক-ডালিম চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করল! যে স্বাধীনতাবিরোধীরা মাকে ছেলেহারা, পিতাকে পুত্রহারা, বোনকে স্বামীহারা করেছিল; জেনারেল জিয়া তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সংবিধান থেকে উৎপাটিত করলেন। এসব সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের সংগ্রাম শেষে বাংলার মানুষ পুনরায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আমাদের অঙ্গীকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। আইনানুগভাবে বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে। অতীত কৃতকর্মের অপরাধে অপরাধীদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা এবং নবপ্রজন্ম চায় যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণ্য ও পৈশাচিক কর্মের বিচার হোক। ’৭১-এর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে অঙ্গীকার আমরা করেছি, তা থেকে কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।
তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগের নেতা, সাংসদ, সভাপতি, শিল্প মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
tofailahmed69@gmail.com
> তোফায়েল আহমেদ
বছর ঘুরে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের অনেক স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করে ৩০ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে মহত্তর বিজয় অর্জন করেছিলাম। যে বাংলার স্বপ্ন সামনে নিয়ে দীর্ঘ ২৪টি বছর কঠিন সংগ্রাম পরিচালনা করে, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে, ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিব। কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বসে যে বাংলার ছবি তিনি হূদয় দিয়ে অঙ্কন করেছিলেন, ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ তাঁর স্বপ্নের আরাধ্য প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
আমার জীবনে ডিসেম্বর মাসটি আনন্দ-বেদনার স্মৃতিবিজড়িত। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হয়েছিলাম। ’৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু মুজিবের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের স্লোগান তুলেছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেদিন সমবেত জনতাকে আহ্বান করে বলেছিলেন, ‘আমার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে স্লোগান তুলুন—আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ ’৭০-এর নির্বাচনে ডিসেম্বরের ৭ তারিখে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬৭টি এবং ১৭ তারিখ প্রাদেশিক পরিষদের ২৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। ডিসেম্বরের প্রতিটি দিন আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ববহ।
মূলত, ৩ ডিসেম্বর থেকে সার্বিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ অর্জন করে। আমরা তখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। মুক্তিবাহিনীর চতুর্মুখী গেরিলা আক্রমণে বিধ্বস্ত পাকিস্তানি বাহিনী এ দিন একতরফাভাবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পাকিস্তান বিমানবাহিনী পশ্চিম ভারতের বিমানঘাঁটিগুলো এমনকি দিল্লির কাছে আগ্রার বিমানক্ষেত্র এবং পূর্ব ফ্রন্টের আগরতলা বিমানঘাঁটিতে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি ও ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী রাত ১০.৩০ মিনিটে সারা ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। রাত ১২.২০ মিনিটে ইন্দিরা গান্ধী এক বেতার ভাষণে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে সাফ জানিয়ে দেন, ‘আজ এই যুদ্ধ ভারতের যুদ্ধ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করল।’ পরদিন ৪ ডিসেম্বর, মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জনে চিঠি লেখেন। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, ‘যদি আমরা পরস্পর আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রবেশ করি, তবে পাকিস্তান সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ অবস্থান অধিকতর সহজতর হয়। অবিলম্বে ভারত সরকার আমাদের দেশ এবং আমাদের সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করুক।’ এর পরপরই ভারতও পাল্টা আক্রমণ চালায়। অতঃপর ৬ ডিসেম্বর, সোমবার, ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ভারত সরকার স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে গৃহীত রাষ্ট্রের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ উদ্ধৃত করে লোকসভার অধিবেশনে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘বাংলাদেশ “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামে অভিহিত হবে।’ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সব সদস্য দাঁড়িয়ে তুমুল হর্ষধ্বনির মাধ্যমে এই ঘোষণাকে অভিনন্দন জানান। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার ও জনসাধারণের ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।
৭ ডিসেম্বর ছিল মুজিবনগর সরকার ও মুজিববাহিনীর জন্য এক বিশেষ দিন। এ দিন মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চল যশোর হানাদারমুক্ত হয়। যশোরের সর্বত্র উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সেদিন মুজিবনগর সরকারের নেতারা ও মুজিববাহিনীর কমান্ডাররাসহ আমরা বিজয়ীর বেশে স্বাধীন বাংলাদেশে শত্রুমুক্ত প্রথম মুক্তাঞ্চল যশোরে প্রবেশ করি। জনসাধারণ আমাদের বিজয়মাল্যে ভূষিত করে। সে আনন্দ-অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আজ ভাবতে অবাক লাগে কত ষড়যন্ত্র, কত বিরোধিতা—সবকিছু সামাল দিয়ে মুজিবনগর সরকারের নেতারা অপূর্ব দক্ষতার সঙ্গে, দল-মত-শ্রেণীনির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে, আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে, সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে ২২ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। অনেকে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে মুজিববাহিনীর ভুল-বোঝাবুঝির কথা বলেন। এটা সঠিক নয়। আমাদের হেডকোয়ার্টার্স ছিল কলকাতা বেইজড। আমি নিয়মিত মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মনে পড়ে জেনারেল ওবানের কথা। তিনি দেরাদুনে আমাদের ট্রেনিং দিতেন। জেনারেল সরকার ও শ্রী ডি পি ধর, যাঁরা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে কো-অর্ডিনেট করতেন। এখানে কারও ব্যক্তিগত খামখেয়ালির কোনো অবকাশ ছিল না। সবাই ছিলেন সুসংগঠিত, পরিকল্পিত এবং সুশৃঙ্খল। সমগ্র বাংলাদেশকে চারটি বৃহৎ অঞ্চলে বিভক্ত করে রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সংগঠিত ছিল মুজিববাহিনী। প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর (এফএফ) সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করাই ছিল মূলত মুজিববাহিনীর কাজ। মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্বে ছিল পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী। শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের দায়িত্বে ছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম ডিভিশন। রাজ্জাক ভাইয়ের দায়িত্বে ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং সিরাজগঞ্জসহ এক বিরাট অঞ্চলের। উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। মুজিববাহিনীর ট্রেনিং হতো দেরাদুনে। দেরাদুন থেকে ট্রেনিং শেষ করে আমার সেক্টরের যারা, তাদের প্লেনে করে ব্যারাকপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসতাম। মুজিববাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের প্রাক্কালে অশ্রুসিক্ত চোখে বুকে টেনে, কপাল চুম্বন করে বিদায় জানাতাম। আমরা মুজিববাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্পে বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু মুজিবকে উদ্দেশ করে বলতাম, ‘প্রিয় নেতা, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো, জানি না! যতক্ষণ আমরা প্রিয় মাতৃভূমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশকে হানাদারমুক্ত করতে না পারব, ততক্ষণ আমরা মায়ের কোলে ফিরে যাব না।’ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর যেদিন বিজয়ী হলাম, সেদিন আমরা সত্যিই মায়ের কোলে ফিরে এলাম। ১৮ ডিসেম্বর আমি এবং শ্রদ্ধেয় নেতা আবদুর রাজ্জাক—আমরা দুই ভাই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আসি। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণ করি। চারদিকে সে কী আনন্দ, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না! প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শ্রদ্ধেয়া ভাবি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ রাসেলসহ যেখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারকে, সেখানে। কিন্তু বিজয়ের আনন্দ ছাপিয়ে কেবলই মনে পড়ছিল প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। দেশ স্বাধীন না হলে ডিসেম্বরেই বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হতো। কিন্তু আমরা জানতাম আমাদের নেতার ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় মনোবলের কথা। ১৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়ে বিজয় অর্জন করার পরও আমরা নিজেদের স্বাধীন ভাবতে পারিনি। কারণ, বঙ্গবন্ধু তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। আমরা পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হলাম, যেদিন ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি বুকভরা আনন্দ আর স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে জাতির পিতা তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন।
ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানিদের দোসর এ দেশীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনীর ঘাতকেরা। ডিসেম্বর মহান বিজয়ের গৌরবমণ্ডিত মাস হলেও ১৪ ডিসেম্বর আমাদের বেদনার দিন। মনে পড়ে নির্ভীক সাংবাদিক শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনের কথা, যাঁর কাছে আমি ঋণী। ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে যিনি আমাকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। মনে পড়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দীন আহমদ, আনোয়ার পাশা, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. আবুল খায়েরসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কথা। জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে ঘাতকেরা আমাদের মেধাহীন জাতিতে পরিণত করতে চেয়েছিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা দিনগুলোতে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল স্বাধীনতার সূত্রে। জাতীয় ঐক্যের অভূতপূর্ব নিদর্শন ছিল সেই দিনগুলো। ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-কৃষক-শ্রমিক-যুবক সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণে সফল গণযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি সুমহান বিজয়। আর এখানেই নিহিত আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক সাফল্য। স্বাধীনতার ডাক দিয়ে একটি নিরস্ত্র জাতিকে তিনি সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। আমরা সেদিন স্লোগান দিয়েছি—‘জাগো জাগো, বাঙালি জাগো’, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জয় বাংলা’ ইত্যাদি। সেদিন কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিষ্টান এসব প্রশ্ন ছিল অবান্তর। আমাদের মূল স্লোগান ছিল ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি’। আমাদের পরিচয় ছিল ‘আমরা সবাই বাঙালি’।
ভাবতে অবাক লাগে, পাকিস্তানের কারাগার বঙ্গবন্ধুকে আটকে রাখতে পারেনি; মৃত্যুদণ্ড দিয়েও কার্যকর করতে পারেনি। অথচ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পরাজিত শক্তির দোসর খুনি মোশতাক-রশীদ-ফারুক-ডালিম চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করল! যে স্বাধীনতাবিরোধীরা মাকে ছেলেহারা, পিতাকে পুত্রহারা, বোনকে স্বামীহারা করেছিল; জেনারেল জিয়া তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সংবিধান থেকে উৎপাটিত করলেন। এসব সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের সংগ্রাম শেষে বাংলার মানুষ পুনরায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আমাদের অঙ্গীকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। আইনানুগভাবে বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে। অতীত কৃতকর্মের অপরাধে অপরাধীদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা এবং নবপ্রজন্ম চায় যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণ্য ও পৈশাচিক কর্মের বিচার হোক। ’৭১-এর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে অঙ্গীকার আমরা করেছি, তা থেকে কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।
তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগের নেতা, সাংসদ, সভাপতি, শিল্প মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
tofailahmed69@gmail.com
No comments:
Post a Comment