একটা সময় নাকি চাকুরী করাকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হত। যারা চাকুরী করত তাদের চাকর মনে করা হত। সাধারনত সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোকজন চাকুরী করত। উচ্চ শ্রেণীর লোকজন চাকুরী করার কথা ভাবতেও পারত না।
দিন আজ অনেক বদলে গেছে। এখন তারাই সমাজে উচ্চ শ্রেণীর বলে ধরা হয়, যারা চাকুরী করে। ছোটবেলা থেকে মা বাবা অনেক যত্নে ছেলে মেয়েকে বড় করে তুলেন, অনেক ভাল ভাল স্কুল-কলেজ এ পড়ান, ছেলে মেয়ের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেন যাতে ছেলে মেয়ে মানুষের মত মানুষ হয়। আর মানুষের মত মানুষ হওয়া মানে বুঝায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোকে। আর নিজের পায়ে দাঁড়ানো মানে বুঝায় একটা ভাল চাকরী পাওয়া। বুঝাই যাচ্ছে চাকুরী আজ আমাদের জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে যত বড় চাকুরী করে সে সমাজে তত প্রতিষ্ঠিত।
বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এই ব্যাপক প্রসার এর পিছনে শুধুমাত্র ছাত্র ছাত্রী বা অভিভাবকরাই দায়ি নয় বরং আমাদের বর্তমান শিক্ষা বেবস্থাও অনেকাংশে দায়ি। এখন সচেতন কোন মা বাবা তাদের সন্তানকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এ পড়ান না, এমনকি গ্রামে গঞ্জেও আজ 'কে জি' নামক স্কুলগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ওই স্কুলগুলো ব্যাপকভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের চাহিদাকে চরমভাবে পূরণ করে যাচ্ছে। আবার বেশি সচেতন মা বাবা তাদের সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে না পড়ালে তাদের পাপ হবে বলেই মনে করেন। এটা গেল নিম্ন শিক্ষার কথা। উচ্চ শিক্ষার দিকে তাকালে দেখতে পাই, এখানে মহা চরমভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটছে। এখন উচ্চ শিক্ষা থেকে কাউকেই বঞ্চিত হতে হয় না, যদি 'লক্ষ্মী' সহায় থাকেন। আমাদের সমাজের অনেক আধুনিক শিক্ষিত গুণীজনের মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি আজকাল লিখাপড়া হয়? ভাল লিখাপড়া হয় ওই সব ফ্ল্যাট বাড়িতে অবস্থিত দামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আগে নাকি আমাদের শিক্ষকরা খুব কৃপণ ছিলেন, পরীক্ষার খাতায় নাম্বারই দিতে চাইতেন না। কেউ যদি ৮০ নাম্বার পেয়ে যেত, কৃপণ শিক্ষকরা দা ছুরি নিয়ে উঠে পড়ে লাগতেন- কি করে নাম্বার কমানো যায়। অনেকে মাত্র ২/৩ নাম্বার এর জন্য পরীক্ষায় ফেল করত। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকদের বেশ ভালভাবেই শায়েস্তা করা হয়েছে। এখন খাতা মূল্যায়ন করার সময় শিক্ষকদের মাথায় রাখতে হয়, কিভাবে একজন ছাত্রকে পাশ করানো যায়। উত্তর ঠিক মত না হলেও যদি কাছাকাছি হয়, এমনকি যদি মনে হয় যে সে আসলে সঠিক উত্তরটাই লিখতে চেয়েছে কিন্তু একটু অন্য রকম লিখে ফেলেছে, তাহলেও তাকে নাম্বার দিতে এখন শিক্ষকরা বদ্ধপরিকর থাকেন। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যে শিক্ষক যত বেশি ভাগ ছাত্র ছাত্রী কে পাশ করাতে পারেন, সে শিক্ষকের তত বেশি বাহাদুরি। অন্যদিকে যে শিক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ছাত্র ছাত্রীদের পাশ করাতে পারেন না, তাঁকে বেরথ মনে করা হয়, তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং তাঁকে বড় কর্তাদের সামনে হাজির হয়ে উক্ত বিষয়ে কৈফিয়ত দিতে হয়। আসলেই তো। নাম্বার দিতে শিক্ষকদের সমস্যা কোথায়! নাম্বার বাড়িয়ে দিলে কি তাঁর হালের গরু মারা যাবে? মোট কথা শিক্ষকদের কৃপণতার আর কোন সুযোগ নেই। আসলেই শিক্ষার ব্যাপক প্রসার আমদের সামনে জ্বল জ্বল করে দৃশ্যমান হচ্ছে।
যাই হোক, শিক্ষার এই রকম ব্যাপক প্রসার এর ফলে আমাদের আশে পাশে বর্তমানে ব্যাপক শিক্ষিত লোকের ছড়াছড়ি। কিন্তু আমাদের দুখিনী বাংলা মায়ের সাধের তুলনায় সাধ্যটা একটু কমই। বাংলাদেশে এখনো শিক্ষার তুলনায় কর্মসংস্থান এর তেমন ব্যাপক প্রসার ঘটে নি। ফলে অনেক শিক্ষিত লোককে তাদের শিক্ষার প্রয়োগ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের চাকুরী দেয়া যাচ্ছে না। একটা চাকুরী যেন আজ সোনার হরিন।
প্রধানত দুই ধরনের চাকুরী আমরা দেখতে পাই। একটি সরকারী চাকুরী, অন্যটা বেসরকারি চাকুরী। এই দুই ধরনের চাকুরীর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। বলা যায়, দুটি মুদ্রার দুই পিঠ। এই দুই ধরনের চাকুরীর মধ্যে সরকারী চাকুরিকেই বেশি এগিয়ে রাখা হয়। সরকারী চাকুরী পাওয়া মানে জীবনের একটি গতি হওয়া। সরকারী চাকুরীর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এটি একটি আরামদায়ক চাকুরী। এই চাকুরীতে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না এবং জবাবদিহিতা নাই বললেই চলে, ফলে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায়, যা স্বাস্থ্য ও বেক্তিগত জীবন উভয়ের জন্যই খুব হিতকর। কেউ কেউ আবার সরকারী চাকুরীকে রাজকীয় চাকুরী বলে অভিহিত করেন। কারন সরকারী চাকুরীর বেতন আসে রাজস্ব(রাজ কোষ) থেকে। ওই সরকারী প্রতিষ্ঠান এর লাভ হোক আর লস হোক, সেটা কোন বিষয় না। মাস শেষ হবার আগেই বেতন অ্যাকাউন্ট এ জমা হয়ে যাবে। বসের সাথে যদি একটু ভাল সম্পর্ক রাখা যায়, তাহলেতো আর কোন কথাই নেই- প্রায় দেরিতে অফিসে যাওয়া, অফিসে না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা থেকে শুরু করে আরও অনেক মহৎ কর্ম অনায়াসেই করে ফেলা যায়। মুরুব্বীরা বলেন, ছোট পদ হোক/ বেতন কম হোক, কোন সমস্যা নাই, সরকারী চাকুরী ধর। আসলেইতো কর্ম বিভাগ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, জিডিপি ০% এ নেমে যেতে পারে, দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে যেতে পারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশ রসাতলে চলে যেতে পারে তারপরও সরকারী চাকুরীজীবীদের চাকুরী যাবে না। আবার কোথাও কোথাও নাকি সরকারী চাকুরীজীবীদের উত্তরসূরিদের জন্য সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা থাকে। এবার বলুন, কেন সরকারী চাকুরী মানুষের প্রথম পছন্দ হবে না? যেখানে নিজের জীবনের পাশাপাশি বংশের বাতির জীবনও নিরাপদ। সরকারী চাকুরেদের বিরুদ্ধে অনেকে ঘুষ খাবার অভিযোগ আনেন। আসলে পুঁজি দিলে তা তুলতে হবে, এটাইতো স্বাভাবিক। সরকারী চাকুরী নামক সোনার হরিনটি ধরার জন্য কেউ যদি ১০/১২ লাখ টাকা পুঁজি দেন তাহলে তাতো তাকে তুলতেই হবে। আর পুঁজি দিয়ে শুধু পুঁজি তুললেই তো হবে না। লাভ সহ তুলতে হবে। এই লাভ সহ পুঁজি তুলতে তুলতে প্রায় সকল সরকারী চাকুরীজীবীরা এতে অভস্থ হয়ে পড়ে। যেখানে মানুষ ধূমপানের সাধারন অভ্যাসই ত্যাগ করতে পারে না, সেখানে ঘুষ খাবার এই মহা-অভ্যাস ত্যাগ করা আসলেই অসম্ভব। সরকারী চাকুরীর সুবিধার কথা শেষ করতে হলে আর একটা 'রামায়ন' লিখে ফেলতে হবে। এক কথায় বলা যায় যে, সরকারী চাকুরী হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র বস্তু যাতে কোন অসুবিধা/অপকার নাই। শুধু সুবিধা আর সুবিধা।
বেসরকারি চাকুরী খুব কষ্টদায়ক। প্রতিটি পদে পদে কৈফিয়ত দিতে হয়। পরিশ্রম এখানে নিত্য সঙ্গী। বেসরকারি চাকুরেরা সকালে অফিসে যাবার সময় বেশ সেজে গুজে, গন্ধ গ্যাস গায়ে মেখে যায় আর যখন অফিস থেকে ফিরে তখন তাকে নিঃশেষিত মনে হয়ে। ঘামের গ্যাস সকালে মাখা গন্ধ গ্যাসকে নিজ দাপটে পরবাসী করে। অনেক বেসরকারি চাকুরে এ পি জে সাহেবের মত এমনকি বিয়ের সময় কখন পার হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল করারই সময় পান না। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে চাকুরী হেফাজতে রেখে নাকি বেসরকারি চাকুরেরা ঘুমান আর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে নেন, তার চাকুরী কি আছে নাকি নাই। অফিসে সময় দিতে দিতে পরিবারে আর সময়ই দেয়া হয়ে উঠে না। দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্যহানি আর সম্পর্কহানি উভয়ই ঘটে। টার্গেট নামক এক বস্তু বেসরকারি চাকুরেদের নিত্য সঙ্গী। টার্গেট পূরণ না হলে গাল মন্দ, বেতন বন্ধ ইত্যাদির পাশাপাশি চাকুরী হারাবারও ভয় থাকে। ঘুষ নামক শব্দটি এখানে অভিধান-বহির্ভূত। বেসরকারী চাকুরীর অসুবিধার কথা শেষ করতে হলে আর একটা 'রামায়ন' লিখে ফেলতে হবে। এক কথায় বলা যায় যে, বেসরকারী চাকুরী হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র বস্তু যাতে কোন সুবিধা/উপকার নাই। শুধু অসুবিধা আর অসুবিধা।
============================
বি দ্র - উপরের লিখাটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত।
দিন আজ অনেক বদলে গেছে। এখন তারাই সমাজে উচ্চ শ্রেণীর বলে ধরা হয়, যারা চাকুরী করে। ছোটবেলা থেকে মা বাবা অনেক যত্নে ছেলে মেয়েকে বড় করে তুলেন, অনেক ভাল ভাল স্কুল-কলেজ এ পড়ান, ছেলে মেয়ের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেন যাতে ছেলে মেয়ে মানুষের মত মানুষ হয়। আর মানুষের মত মানুষ হওয়া মানে বুঝায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোকে। আর নিজের পায়ে দাঁড়ানো মানে বুঝায় একটা ভাল চাকরী পাওয়া। বুঝাই যাচ্ছে চাকুরী আজ আমাদের জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে যত বড় চাকুরী করে সে সমাজে তত প্রতিষ্ঠিত।
বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এই ব্যাপক প্রসার এর পিছনে শুধুমাত্র ছাত্র ছাত্রী বা অভিভাবকরাই দায়ি নয় বরং আমাদের বর্তমান শিক্ষা বেবস্থাও অনেকাংশে দায়ি। এখন সচেতন কোন মা বাবা তাদের সন্তানকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এ পড়ান না, এমনকি গ্রামে গঞ্জেও আজ 'কে জি' নামক স্কুলগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ওই স্কুলগুলো ব্যাপকভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের চাহিদাকে চরমভাবে পূরণ করে যাচ্ছে। আবার বেশি সচেতন মা বাবা তাদের সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে না পড়ালে তাদের পাপ হবে বলেই মনে করেন। এটা গেল নিম্ন শিক্ষার কথা। উচ্চ শিক্ষার দিকে তাকালে দেখতে পাই, এখানে মহা চরমভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটছে। এখন উচ্চ শিক্ষা থেকে কাউকেই বঞ্চিত হতে হয় না, যদি 'লক্ষ্মী' সহায় থাকেন। আমাদের সমাজের অনেক আধুনিক শিক্ষিত গুণীজনের মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি আজকাল লিখাপড়া হয়? ভাল লিখাপড়া হয় ওই সব ফ্ল্যাট বাড়িতে অবস্থিত দামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আগে নাকি আমাদের শিক্ষকরা খুব কৃপণ ছিলেন, পরীক্ষার খাতায় নাম্বারই দিতে চাইতেন না। কেউ যদি ৮০ নাম্বার পেয়ে যেত, কৃপণ শিক্ষকরা দা ছুরি নিয়ে উঠে পড়ে লাগতেন- কি করে নাম্বার কমানো যায়। অনেকে মাত্র ২/৩ নাম্বার এর জন্য পরীক্ষায় ফেল করত। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকদের বেশ ভালভাবেই শায়েস্তা করা হয়েছে। এখন খাতা মূল্যায়ন করার সময় শিক্ষকদের মাথায় রাখতে হয়, কিভাবে একজন ছাত্রকে পাশ করানো যায়। উত্তর ঠিক মত না হলেও যদি কাছাকাছি হয়, এমনকি যদি মনে হয় যে সে আসলে সঠিক উত্তরটাই লিখতে চেয়েছে কিন্তু একটু অন্য রকম লিখে ফেলেছে, তাহলেও তাকে নাম্বার দিতে এখন শিক্ষকরা বদ্ধপরিকর থাকেন। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যে শিক্ষক যত বেশি ভাগ ছাত্র ছাত্রী কে পাশ করাতে পারেন, সে শিক্ষকের তত বেশি বাহাদুরি। অন্যদিকে যে শিক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ছাত্র ছাত্রীদের পাশ করাতে পারেন না, তাঁকে বেরথ মনে করা হয়, তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং তাঁকে বড় কর্তাদের সামনে হাজির হয়ে উক্ত বিষয়ে কৈফিয়ত দিতে হয়। আসলেই তো। নাম্বার দিতে শিক্ষকদের সমস্যা কোথায়! নাম্বার বাড়িয়ে দিলে কি তাঁর হালের গরু মারা যাবে? মোট কথা শিক্ষকদের কৃপণতার আর কোন সুযোগ নেই। আসলেই শিক্ষার ব্যাপক প্রসার আমদের সামনে জ্বল জ্বল করে দৃশ্যমান হচ্ছে।
যাই হোক, শিক্ষার এই রকম ব্যাপক প্রসার এর ফলে আমাদের আশে পাশে বর্তমানে ব্যাপক শিক্ষিত লোকের ছড়াছড়ি। কিন্তু আমাদের দুখিনী বাংলা মায়ের সাধের তুলনায় সাধ্যটা একটু কমই। বাংলাদেশে এখনো শিক্ষার তুলনায় কর্মসংস্থান এর তেমন ব্যাপক প্রসার ঘটে নি। ফলে অনেক শিক্ষিত লোককে তাদের শিক্ষার প্রয়োগ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের চাকুরী দেয়া যাচ্ছে না। একটা চাকুরী যেন আজ সোনার হরিন।
প্রধানত দুই ধরনের চাকুরী আমরা দেখতে পাই। একটি সরকারী চাকুরী, অন্যটা বেসরকারি চাকুরী। এই দুই ধরনের চাকুরীর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। বলা যায়, দুটি মুদ্রার দুই পিঠ। এই দুই ধরনের চাকুরীর মধ্যে সরকারী চাকুরিকেই বেশি এগিয়ে রাখা হয়। সরকারী চাকুরী পাওয়া মানে জীবনের একটি গতি হওয়া। সরকারী চাকুরীর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এটি একটি আরামদায়ক চাকুরী। এই চাকুরীতে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না এবং জবাবদিহিতা নাই বললেই চলে, ফলে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায়, যা স্বাস্থ্য ও বেক্তিগত জীবন উভয়ের জন্যই খুব হিতকর। কেউ কেউ আবার সরকারী চাকুরীকে রাজকীয় চাকুরী বলে অভিহিত করেন। কারন সরকারী চাকুরীর বেতন আসে রাজস্ব(রাজ কোষ) থেকে। ওই সরকারী প্রতিষ্ঠান এর লাভ হোক আর লস হোক, সেটা কোন বিষয় না। মাস শেষ হবার আগেই বেতন অ্যাকাউন্ট এ জমা হয়ে যাবে। বসের সাথে যদি একটু ভাল সম্পর্ক রাখা যায়, তাহলেতো আর কোন কথাই নেই- প্রায় দেরিতে অফিসে যাওয়া, অফিসে না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা থেকে শুরু করে আরও অনেক মহৎ কর্ম অনায়াসেই করে ফেলা যায়। মুরুব্বীরা বলেন, ছোট পদ হোক/ বেতন কম হোক, কোন সমস্যা নাই, সরকারী চাকুরী ধর। আসলেইতো কর্ম বিভাগ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, জিডিপি ০% এ নেমে যেতে পারে, দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে যেতে পারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশ রসাতলে চলে যেতে পারে তারপরও সরকারী চাকুরীজীবীদের চাকুরী যাবে না। আবার কোথাও কোথাও নাকি সরকারী চাকুরীজীবীদের উত্তরসূরিদের জন্য সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা থাকে। এবার বলুন, কেন সরকারী চাকুরী মানুষের প্রথম পছন্দ হবে না? যেখানে নিজের জীবনের পাশাপাশি বংশের বাতির জীবনও নিরাপদ। সরকারী চাকুরেদের বিরুদ্ধে অনেকে ঘুষ খাবার অভিযোগ আনেন। আসলে পুঁজি দিলে তা তুলতে হবে, এটাইতো স্বাভাবিক। সরকারী চাকুরী নামক সোনার হরিনটি ধরার জন্য কেউ যদি ১০/১২ লাখ টাকা পুঁজি দেন তাহলে তাতো তাকে তুলতেই হবে। আর পুঁজি দিয়ে শুধু পুঁজি তুললেই তো হবে না। লাভ সহ তুলতে হবে। এই লাভ সহ পুঁজি তুলতে তুলতে প্রায় সকল সরকারী চাকুরীজীবীরা এতে অভস্থ হয়ে পড়ে। যেখানে মানুষ ধূমপানের সাধারন অভ্যাসই ত্যাগ করতে পারে না, সেখানে ঘুষ খাবার এই মহা-অভ্যাস ত্যাগ করা আসলেই অসম্ভব। সরকারী চাকুরীর সুবিধার কথা শেষ করতে হলে আর একটা 'রামায়ন' লিখে ফেলতে হবে। এক কথায় বলা যায় যে, সরকারী চাকুরী হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র বস্তু যাতে কোন অসুবিধা/অপকার নাই। শুধু সুবিধা আর সুবিধা।
বেসরকারি চাকুরী খুব কষ্টদায়ক। প্রতিটি পদে পদে কৈফিয়ত দিতে হয়। পরিশ্রম এখানে নিত্য সঙ্গী। বেসরকারি চাকুরেরা সকালে অফিসে যাবার সময় বেশ সেজে গুজে, গন্ধ গ্যাস গায়ে মেখে যায় আর যখন অফিস থেকে ফিরে তখন তাকে নিঃশেষিত মনে হয়ে। ঘামের গ্যাস সকালে মাখা গন্ধ গ্যাসকে নিজ দাপটে পরবাসী করে। অনেক বেসরকারি চাকুরে এ পি জে সাহেবের মত এমনকি বিয়ের সময় কখন পার হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল করারই সময় পান না। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে চাকুরী হেফাজতে রেখে নাকি বেসরকারি চাকুরেরা ঘুমান আর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে নেন, তার চাকুরী কি আছে নাকি নাই। অফিসে সময় দিতে দিতে পরিবারে আর সময়ই দেয়া হয়ে উঠে না। দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্যহানি আর সম্পর্কহানি উভয়ই ঘটে। টার্গেট নামক এক বস্তু বেসরকারি চাকুরেদের নিত্য সঙ্গী। টার্গেট পূরণ না হলে গাল মন্দ, বেতন বন্ধ ইত্যাদির পাশাপাশি চাকুরী হারাবারও ভয় থাকে। ঘুষ নামক শব্দটি এখানে অভিধান-বহির্ভূত। বেসরকারী চাকুরীর অসুবিধার কথা শেষ করতে হলে আর একটা 'রামায়ন' লিখে ফেলতে হবে। এক কথায় বলা যায় যে, বেসরকারী চাকুরী হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র বস্তু যাতে কোন সুবিধা/উপকার নাই। শুধু অসুবিধা আর অসুবিধা।
============================
বি দ্র - উপরের লিখাটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত।
No comments:
Post a Comment