Thursday, January 7, 2021

বাংলাদেশের এক প্রান্তের একটি ছোট গল্প

 সন্ধ্যা প্রায় সাতটা। আষাঢ়ে বৃষ্টি হচ্ছে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া রায়হান সুর করে পড়ছে- আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। এটি একটি ছোট  কিন্তু জনবহুল দেশ................। মিসেস ফরিদ রান্নার জোগাড় করছেন; পাশাপাশি ফুটো হয়ে যাওয়া টিনের চালের যেসব অংশ দিয়ে ঘরে পানি পড়ছে সেখানে কিছু পাতিল বসিয়ে দিচ্ছেন। ফরিদ সাহেব বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে ধূমপান করতে করতে ভাবছেন।

- কতবার বললাম বৃষ্টির দিন আসছে, একজন মানুষ এনে টিনের চালটা মেরামত করার জন্য। কত জায়গায় আর পাতিল বসাব, পাতিল সব শেষ হবার অবস্থা। এভাবে ঘরে থাকা যায়?

স্ত্রীর কথা শুনে ফরিদ সাহেব শেষ টান দিয়ে সিগারেটটা উঠোনে ফেললেন।

- রফিককে বলেছিলাম, সে তো আসলো না। দেখি কাল একবার যাব ওদিকে।

রায়হান একটু থেমে মা বাবার কথা শুনে আবার পড়া শুরু করলো- আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। এটি একটি ছোট  কিন্তু জনবহুল দেশ................।


পরেরদিন ফরিদ সাহেব নিজের সাথে করে রফিক মিস্ত্রিকে নিয়ে আসলেন। রফিক টিনের চালে উঠে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো।

- টিন তো কাকা সব গেছে। এখন আপাততঃ পুটিং লাগিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু টিন পাল্টাতে হবে। কমপক্ষে ছয়টা টিন লাগবেই। 

ফরিদ সাহেবের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। এই মুহূর্তে এতো টাকা জোগাড় করা কষ্টসাধ্য। 

- আচ্ছা, এখন পুটিং লাগিয়ে দাও। আমি টিন এনে তোমাকে খবর দিব।

- জ্বী কাকা।

রায়হান ছাতা মাথায় উঠোনে দৌড়াদৌড়ি করতে দিয়ে পা পিছলে পড়ে গেল। মিসেস ফরিদ ছুটে গেলেন।

- এ ছেলে আমাকে শান্তি দিবে না।

- কেটেছে কিনা দেখ। কাটলে একটু স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে মলম লাগিয়ে দাও।


ফরিদ সাহেব বেতন পাবেন আরো বারো দিন পর। অল্প বেতনের চাকুরী করেন। সংসারে টানাপোড়ন লেগেই থাকে। চালের টিনগুলো অনেক আগেই পাল্টাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে, রায়হানের লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ করে মাস শেষে হাতে আর কিছুই থাকেনা। কিন্তু এবার যেভাবেই হোক টিনগুলো পাল্টাতে হবে। ঘরে বৃষ্টি হলেই যে পরিমাণ পানি পড়ে তাতে কয়েকদিন পর ঘরে থাকাই দুস্কর হয়ে যাবে। 


মাস শেষে বেতনের টাকা তুলে মুদি দোকান, সবজি দোকানের দেনা শোধ করে এবং কিছু মাছ-মাংস কেনার পর যে পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট রইলো তাতে টেনেটুনে ছয়টা টিন কেনা যেতে পারে কিন্তু হাতে আর অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না। ফরিদ সাহেব টিনের দোকানে গিয়ে দুটি টিন কিনে এনে ঘরে রাখলেন। পরের দু'মাসে দুটি করে আরো চারটি টিন কিনে রাফিককে ডেকে এনে কাজ করাবেন।


- আর পারি না। চালের উপর লক্ষ লক্ষ ছিদ্র হয়ে আছে। কত জায়গায় পাতিল বসানো যায়। ছয়টা টিন কিনতে কিনতে বৃষ্টির দিনই শেষ হবে। রান্না করতে করতে অর্ধেক ভিজে গেলাম। খাটের উপরও পানি পড়তে শুরু করেছে। 

- খাটটা একপাশে সরিয়ে নিতে হবে। আগামী মাসে আরেকটু সাশ্রয় করে চারটা টিন কেনা যায় কিনা দেখবো। মাস শেষ হোক।


রায়হান একটু থেমে মা বাবার কথা শুনে আবার পড়া শুরু করলো- আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। এটি একটি ছোট  কিন্তু জনবহুল ও দরিদ্র দেশ................।


> বাংলাদেশের এক প্রান্তের একটি ছোট গল্প 

> প্রবাল ভৌমিক

> জুন'২০২০

Post Comment

No comments:

Post a Comment