তন্বী এখন বাসায় থাকে, কারন তার অনার্স পরীক্ষা মাত্র শেষ হয়েছে, এখনো রেজাল্ট হয় নি।
তন্বীর বাবা রহমত সাহেব একজন পল্লী চিকিৎসক এবং মা মিসেস রহমত একজন গৃহিণী। রহমত সাহেবের এক ছেলে, এক মেয়ে। সুখি পরিবার। রহমত সাহেবের বাবা একজন সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। মারা যাবার আগে রহমত সাহেব কে ২০০ বিঘা জমির মালিক করে গেছেন তার বাবা। এরপর অবশ্য রহমত সাহেবও ইতিমধ্যে আরও ৫ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। নিজের জমির ধানের ভাত খান, নিজের পুকুরের মাছ খান, এককথায় সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী। রহমত সাহেব ম্যাট্রিক পাস করে এল এম এফ কোর্স করে এখন গঞ্জের নাম করা ডাক্তার। রহমত সাহেবের আশা, তার ছেলে মেয়েকে তিনি উচ্চ শিক্ষিত করবেন। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে সফল, মেয়ে অনার্স শেষ করল। ছেলে ছোট, রাসেল, সে এখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ছে।
রহমত সাহেব আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন যে মেয়ের অনার্স শেষ হলে আর দেরি করবেন না। ভাল পাত্র দেখে মেয়েকে পাত্রস্থ করবেন। তাই, ছেলে দেখা চলতে লাগল। আত্মীয় স্বজন, ঘটক দের মাধ্যমে রহমত সাহেব সু পাত্রের সন্ধান করতে লাগলেন। সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। ভাল ভাল ঘর থেকে সম্বন্ধ আসতে লাগল। ব্যবসায়ি, গার্মেন্টস এর বড় কর্মকর্তা, এন জি ও -র বড় অফিসার সহ বিভিন্ন ধরনের পাত্রের সন্ধান আসতে লাগল। কিন্তু কোনটাই রহমত সাহেব এর কাছে তেমন একটা জুতসই লাগছিল না। শেষে রহমত সাহেব সবাইকে ডেকে ঝেড়ে কাশলেন, বললেন, এইসব কি পাত্র তোমরা নিয়ে আসছ? হয়তো সরকারী কোন চাকুরীজীবী ছেলে আন আর না হলে কোন ব্যাংকার ছেলে আন। সবাই তাদের করনীয় বুঝতে পেরে নির্দেশনা অনুযায়ী আবার কাজে ঝাপিয়ে পড়ল।
এখানে একটা বিষয় বলা প্রয়োজন, তন্বী সব কিছু দেখছিল এবং মনে মনে সে খুশিও হচ্ছিল। কিন্তু বাইরে থেকে এমন একটা ভাব দেখাচ্ছিল যে সে মোটেই এসব পছন্দ করছে না, মা বাবার সাথে চিরজীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন সে চির সুখি হবে।
তন্বী ছোট বেলা থেকে মা বাবার কড়া শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। সে তার মা বাবাকে চিনে ও ভাল করে জানে। সে খুব ভাল করেই জানে, তার বিয়ে হবে তার মা বাবার ইচ্ছেতে, এখানে তার ইচ্ছের কোন দাম নেই। কড়া শাসন, মা বাবার খবরদারি, মত প্রকাশের বিনা স্বাধীনতার মাঝেও যে তার জীবনে প্রেম আসেনি এ কথা বলা যাবে না। প্রেম সবার জীবনেই আসে এবং তন্বীর জীবনেও আসেছিল, বেশ কয়েকবার কিন্তু কোনটাকেই সে বেশি দূর গড়াতে দেয়নি। ফলে আজ তার তেমন কোন সমস্যা নেই, নেই হৃদয় ভেঙ্গে যাবার চাপা ক্রন্দন বরং আছে চাপা ভালোলাগা, বউ সাজার পুলকিত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের অপেক্ষা।
আবুল ঘটক একটি ছেলের খোঁজ নিয়ে এসেছে। ছেলে শিল্প মন্ত্রনালয়ে চাকরি করে, সরকারী চাকুরি। বেতন মাসে প্রায় ৮০০০-১০০০০ টাকা। তবে সরকারী চাকুরী, উপরি আছে, মাসে ২০,০০০ - ২৫,০০০ টাকা গড়ে আয় হয়। রহমত সাহেব যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। ভাল সম্বন্ধ এসেছে। পরিচয়ক্রমে রহমত সাহেব ছেলের বাবা কে চিনলেন। ছেলেদের বাড়ি পাশের গ্রামে। ছেলের বাবা স্কুল শিক্ষক। ছেলে অনার্স, মাস্টার্স। পরের শুক্রবার ছেলেরা মেয়ে দেখতে আসবে, সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে, মেয়েকে ছেলের পছন্দ হলে ওই দিনই শুভ কাজ সেরে ফেলবেন বলে সিদ্ধান্ত হল। ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে রহমত সাহেব ঘটক সাহেব কে বিদায় করলেন এবং পরের শুক্রবারের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই মিলে খাচ্ছিলেন। রহমত সাহেব তন্বীর দিকে চেয়ে বললেন, মা, সব খোদার ইচ্ছা। ভাল ছেলে কয়জনের কপালে জুটে। খুব ভাল ছেলে পাওয়া গেছে। ছেলেকে আমি দেখেছি। পাশের গ্রামের কোব্বাত মাস্টারের ছেলে। নম্র, ভদ্র, সবচেয়ে বড় কথা যে ছেলে সরকারী চাকরী করে। আশা করছি, আগামী শুক্রবার শুভ কাজ হয়ে যাবে। এরপর বীরের মত বললেন, আমার সুন্দরী মাকে পছন্দ না হয়ে পারে? মিসেস রহমত বললেন, ছেলের তো শুনলাম বেতন কম, মাত্র ৮০০০ টাকা। এর আগে যারা এসেছিল তাদের বেতন তো এর চেয়ে অনেক বেশি। সবশেষে যে সম্বন্ধ এসেছিল, ওই যে একটি এন জি ও -র বড় অফিসার তার বেতন নাকি মাসে ২২,০০০ টাকা। সে তুলনায় তো ছেলের ইনকাম তেমন ভাল না। স্ত্রীর কথা শুনে রহমত সাহেব একটু খেঁকিয়ে উঠলেন, এত বেশি বুঝলেতো হবে না। কোথায় সরকারী চাকরী আর কোথায় এন জি ও -র চাকরী। কিছু বুঝ? মুখে একটা বিদ্রুপের হাসি হেসে রহমত সাহেব বললেন, এই সব এন জি ও -র চাকরীর কোন গ্যারান্টি আছে? আজ আছে তো কাল নাই। এন জি ও -র চাকরী, এইটা পরিচয় দেবার মত কোন চাকরী হল। কেউ যখন আমার কাছে জানতে চাইবে, আপনার মেয়ে জামাই কি করে তখন আমি বলব "কিস্তি -ওয়ালার" চাকরী করে, তাই চাও, না? ছি ছি ছি। রহমত সাহেব এবার মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে যোগ করলেন, সরকারী চাকরী, জীবনে কোন দিন কারো সরকারী চাকরী গেছে শুনছ? তেমন পরিশ্রম নাই, আরামে চাকরী করে। কত সন্মান। সবাই স্যার স্যার বলে ডাকে। আর বেতন? টাকা পাইলেই তো হইল। বেতন কম তো কি হয়েছে, মাসে ইনকামতো ভাল। এবার রহমত সাহেব তার সারা জীবনের সততার বুকে কুঠারাঘাত করে বললেন, এই দুনিয়াতে কে এত ভাল আছে। এই দুনিয়ায় চলতে গেলে এমন উপরি ইনকাম থাকতে হয়। সবাই করে। বর্তমানে এইটাতে কোন দোষ নাই। সবচেয়ে বড় কথা, আমি সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারব আমার মেয়ে জামাই একজন সরকারী চাকুরীজীবী। কত গর্বের।
তন্বী এতক্ষন মাথা নিচু করে ভাত খেতে খেতে মা বাবার কথা শুনছিল। তার খাওয়া শেষ। সে উঠে বেসিনের দিকে হাঁটতে লাগল। এখনো তার মাথা নিচু। মিসেস রহমত বলল, সব ভাল হলে তো ভাল। আমি তো চাই আমার মেয়ে সুখে থাকুক। আগামী শুক্রবার তো তারা আসবে, পছন্দ হলে বিয়ে, এর মধ্যে একটু খোঁজ খবর করেন। রহমত সাহেব উত্তর দিলেন, কোন খোঁজ খবর নিতে হবে না। আমি এমন ছেলে হারাতে চাই না। ছেলে সরকারী চাকরী করে।
শুক্রবার এসে গেল, কোব্বাত মাস্টারের ছেলে দেবুর তন্বীকে খুব পছন্দ হল। সুতরাং শুভ কাজে আর কোন বাধা থাকল না। কাজী ডাকা হল। পাড়া প্রতিবেশী দের খবর দেয়া হল। দেবু - তন্বীর বিয়ে হল।
পুনশ্চ - পরে জানা গেল, দেবু ৩ বার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারে নি। সে প্রকৃত পক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। এটা জেনেও রহমত সাহেব তেমন একটা বিচলিত হলেন না। তিনি নিজেকে আশ্বস্ত করতে লাগলেন,ছেলের পড়ালেখা কম তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে? ছেলেতো সরকারী চাকুরী করে। অবশ্য আর কিছুদিন যাবার পর রহমত সাহেব সহ সবাই জানতে পারলেন, ছেলে শিল্প মন্ত্রনালয়ে চাকরী করে, সরকারী চাকরী করে, সব ঠিক আছে, তবে ছেলে পদবি "পিয়ন"। এটা জানার পরও সবাই মেনে নেয়, কারন এটাই বাস্তবতা আর বাস্তবতা সবাইকে মেনে নিতে হয়।
কেউ কেউ বলে, এ সব ঘটনা জানার পর নাকি তন্বী লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। মিসেস রহমত মাঝে মাঝে আপন মনে বলে যায়, বলেছিলাম একটু খোঁজ খবর নিতে, সরকারী চাকরীজীবী তাই তিনি কোন খোঁজ নিলেন না, আজ আমার মেয়েটা দুঃখী। আর রহমত সাহেব প্রতিদিল চেম্বার এ যান, কেউ যখন জানতে চায়, মেয়ে জামাই কি করে তখন রহমত সাহেব মাটির দিকে তাকিয়ে ভার ভার গলায় বলেন, মেয়ে জামাই "সরকারী চাকুরীজীবী"।
তন্বীর বাবা রহমত সাহেব একজন পল্লী চিকিৎসক এবং মা মিসেস রহমত একজন গৃহিণী। রহমত সাহেবের এক ছেলে, এক মেয়ে। সুখি পরিবার। রহমত সাহেবের বাবা একজন সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। মারা যাবার আগে রহমত সাহেব কে ২০০ বিঘা জমির মালিক করে গেছেন তার বাবা। এরপর অবশ্য রহমত সাহেবও ইতিমধ্যে আরও ৫ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। নিজের জমির ধানের ভাত খান, নিজের পুকুরের মাছ খান, এককথায় সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী। রহমত সাহেব ম্যাট্রিক পাস করে এল এম এফ কোর্স করে এখন গঞ্জের নাম করা ডাক্তার। রহমত সাহেবের আশা, তার ছেলে মেয়েকে তিনি উচ্চ শিক্ষিত করবেন। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে সফল, মেয়ে অনার্স শেষ করল। ছেলে ছোট, রাসেল, সে এখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ছে।
রহমত সাহেব আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন যে মেয়ের অনার্স শেষ হলে আর দেরি করবেন না। ভাল পাত্র দেখে মেয়েকে পাত্রস্থ করবেন। তাই, ছেলে দেখা চলতে লাগল। আত্মীয় স্বজন, ঘটক দের মাধ্যমে রহমত সাহেব সু পাত্রের সন্ধান করতে লাগলেন। সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। ভাল ভাল ঘর থেকে সম্বন্ধ আসতে লাগল। ব্যবসায়ি, গার্মেন্টস এর বড় কর্মকর্তা, এন জি ও -র বড় অফিসার সহ বিভিন্ন ধরনের পাত্রের সন্ধান আসতে লাগল। কিন্তু কোনটাই রহমত সাহেব এর কাছে তেমন একটা জুতসই লাগছিল না। শেষে রহমত সাহেব সবাইকে ডেকে ঝেড়ে কাশলেন, বললেন, এইসব কি পাত্র তোমরা নিয়ে আসছ? হয়তো সরকারী কোন চাকুরীজীবী ছেলে আন আর না হলে কোন ব্যাংকার ছেলে আন। সবাই তাদের করনীয় বুঝতে পেরে নির্দেশনা অনুযায়ী আবার কাজে ঝাপিয়ে পড়ল।
এখানে একটা বিষয় বলা প্রয়োজন, তন্বী সব কিছু দেখছিল এবং মনে মনে সে খুশিও হচ্ছিল। কিন্তু বাইরে থেকে এমন একটা ভাব দেখাচ্ছিল যে সে মোটেই এসব পছন্দ করছে না, মা বাবার সাথে চিরজীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন সে চির সুখি হবে।
তন্বী ছোট বেলা থেকে মা বাবার কড়া শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। সে তার মা বাবাকে চিনে ও ভাল করে জানে। সে খুব ভাল করেই জানে, তার বিয়ে হবে তার মা বাবার ইচ্ছেতে, এখানে তার ইচ্ছের কোন দাম নেই। কড়া শাসন, মা বাবার খবরদারি, মত প্রকাশের বিনা স্বাধীনতার মাঝেও যে তার জীবনে প্রেম আসেনি এ কথা বলা যাবে না। প্রেম সবার জীবনেই আসে এবং তন্বীর জীবনেও আসেছিল, বেশ কয়েকবার কিন্তু কোনটাকেই সে বেশি দূর গড়াতে দেয়নি। ফলে আজ তার তেমন কোন সমস্যা নেই, নেই হৃদয় ভেঙ্গে যাবার চাপা ক্রন্দন বরং আছে চাপা ভালোলাগা, বউ সাজার পুলকিত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের অপেক্ষা।
আবুল ঘটক একটি ছেলের খোঁজ নিয়ে এসেছে। ছেলে শিল্প মন্ত্রনালয়ে চাকরি করে, সরকারী চাকুরি। বেতন মাসে প্রায় ৮০০০-১০০০০ টাকা। তবে সরকারী চাকুরী, উপরি আছে, মাসে ২০,০০০ - ২৫,০০০ টাকা গড়ে আয় হয়। রহমত সাহেব যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। ভাল সম্বন্ধ এসেছে। পরিচয়ক্রমে রহমত সাহেব ছেলের বাবা কে চিনলেন। ছেলেদের বাড়ি পাশের গ্রামে। ছেলের বাবা স্কুল শিক্ষক। ছেলে অনার্স, মাস্টার্স। পরের শুক্রবার ছেলেরা মেয়ে দেখতে আসবে, সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে, মেয়েকে ছেলের পছন্দ হলে ওই দিনই শুভ কাজ সেরে ফেলবেন বলে সিদ্ধান্ত হল। ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে রহমত সাহেব ঘটক সাহেব কে বিদায় করলেন এবং পরের শুক্রবারের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই মিলে খাচ্ছিলেন। রহমত সাহেব তন্বীর দিকে চেয়ে বললেন, মা, সব খোদার ইচ্ছা। ভাল ছেলে কয়জনের কপালে জুটে। খুব ভাল ছেলে পাওয়া গেছে। ছেলেকে আমি দেখেছি। পাশের গ্রামের কোব্বাত মাস্টারের ছেলে। নম্র, ভদ্র, সবচেয়ে বড় কথা যে ছেলে সরকারী চাকরী করে। আশা করছি, আগামী শুক্রবার শুভ কাজ হয়ে যাবে। এরপর বীরের মত বললেন, আমার সুন্দরী মাকে পছন্দ না হয়ে পারে? মিসেস রহমত বললেন, ছেলের তো শুনলাম বেতন কম, মাত্র ৮০০০ টাকা। এর আগে যারা এসেছিল তাদের বেতন তো এর চেয়ে অনেক বেশি। সবশেষে যে সম্বন্ধ এসেছিল, ওই যে একটি এন জি ও -র বড় অফিসার তার বেতন নাকি মাসে ২২,০০০ টাকা। সে তুলনায় তো ছেলের ইনকাম তেমন ভাল না। স্ত্রীর কথা শুনে রহমত সাহেব একটু খেঁকিয়ে উঠলেন, এত বেশি বুঝলেতো হবে না। কোথায় সরকারী চাকরী আর কোথায় এন জি ও -র চাকরী। কিছু বুঝ? মুখে একটা বিদ্রুপের হাসি হেসে রহমত সাহেব বললেন, এই সব এন জি ও -র চাকরীর কোন গ্যারান্টি আছে? আজ আছে তো কাল নাই। এন জি ও -র চাকরী, এইটা পরিচয় দেবার মত কোন চাকরী হল। কেউ যখন আমার কাছে জানতে চাইবে, আপনার মেয়ে জামাই কি করে তখন আমি বলব "কিস্তি -ওয়ালার" চাকরী করে, তাই চাও, না? ছি ছি ছি। রহমত সাহেব এবার মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে যোগ করলেন, সরকারী চাকরী, জীবনে কোন দিন কারো সরকারী চাকরী গেছে শুনছ? তেমন পরিশ্রম নাই, আরামে চাকরী করে। কত সন্মান। সবাই স্যার স্যার বলে ডাকে। আর বেতন? টাকা পাইলেই তো হইল। বেতন কম তো কি হয়েছে, মাসে ইনকামতো ভাল। এবার রহমত সাহেব তার সারা জীবনের সততার বুকে কুঠারাঘাত করে বললেন, এই দুনিয়াতে কে এত ভাল আছে। এই দুনিয়ায় চলতে গেলে এমন উপরি ইনকাম থাকতে হয়। সবাই করে। বর্তমানে এইটাতে কোন দোষ নাই। সবচেয়ে বড় কথা, আমি সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারব আমার মেয়ে জামাই একজন সরকারী চাকুরীজীবী। কত গর্বের।
তন্বী এতক্ষন মাথা নিচু করে ভাত খেতে খেতে মা বাবার কথা শুনছিল। তার খাওয়া শেষ। সে উঠে বেসিনের দিকে হাঁটতে লাগল। এখনো তার মাথা নিচু। মিসেস রহমত বলল, সব ভাল হলে তো ভাল। আমি তো চাই আমার মেয়ে সুখে থাকুক। আগামী শুক্রবার তো তারা আসবে, পছন্দ হলে বিয়ে, এর মধ্যে একটু খোঁজ খবর করেন। রহমত সাহেব উত্তর দিলেন, কোন খোঁজ খবর নিতে হবে না। আমি এমন ছেলে হারাতে চাই না। ছেলে সরকারী চাকরী করে।
শুক্রবার এসে গেল, কোব্বাত মাস্টারের ছেলে দেবুর তন্বীকে খুব পছন্দ হল। সুতরাং শুভ কাজে আর কোন বাধা থাকল না। কাজী ডাকা হল। পাড়া প্রতিবেশী দের খবর দেয়া হল। দেবু - তন্বীর বিয়ে হল।
পুনশ্চ - পরে জানা গেল, দেবু ৩ বার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারে নি। সে প্রকৃত পক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। এটা জেনেও রহমত সাহেব তেমন একটা বিচলিত হলেন না। তিনি নিজেকে আশ্বস্ত করতে লাগলেন,ছেলের পড়ালেখা কম তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে? ছেলেতো সরকারী চাকুরী করে। অবশ্য আর কিছুদিন যাবার পর রহমত সাহেব সহ সবাই জানতে পারলেন, ছেলে শিল্প মন্ত্রনালয়ে চাকরী করে, সরকারী চাকরী করে, সব ঠিক আছে, তবে ছেলে পদবি "পিয়ন"। এটা জানার পরও সবাই মেনে নেয়, কারন এটাই বাস্তবতা আর বাস্তবতা সবাইকে মেনে নিতে হয়।
কেউ কেউ বলে, এ সব ঘটনা জানার পর নাকি তন্বী লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। মিসেস রহমত মাঝে মাঝে আপন মনে বলে যায়, বলেছিলাম একটু খোঁজ খবর নিতে, সরকারী চাকরীজীবী তাই তিনি কোন খোঁজ নিলেন না, আজ আমার মেয়েটা দুঃখী। আর রহমত সাহেব প্রতিদিল চেম্বার এ যান, কেউ যখন জানতে চায়, মেয়ে জামাই কি করে তখন রহমত সাহেব মাটির দিকে তাকিয়ে ভার ভার গলায় বলেন, মেয়ে জামাই "সরকারী চাকুরীজীবী"।
No comments:
Post a Comment