উত্তরবঙ্গ সম্পর্কে অনেক আগে থেকে আগ্রহ ছিল। রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, রাজশাহী এই সব এলাকার খবর যখন সংবাদপত্রে পড়তাম, মনে মনে ভাবতাম কেমন এই এলাকাগুলো? কল্পনায় হারাতাম এবং মনের আয়নায় ছবি আঁকতাম। এইচ এস সি পরীক্ষার পর আমার কিছু বন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল, ওরা ফিরে যখন গল্প করেছিল, অনেক আগ্রহ নিয়ে শুনেছিলাম ওদের সেই গল্প।
"ঘাসফুল" এ আমি যোগদান করি ১২.৪.২০০৮ তারিখে, অনেকটা হঠাৎ করেই। ঘাসফুল এ আমার প্রথম পোস্টিং চট্টগ্রাম এর মাদারবাড়ি ৪ নং শাখায়। টুটুল দার (বর্তমানে ঘাসফুল এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার) হাতে আমার মাইক্রো ফাইনান্স এ হাতেখড়ি। প্রায় দেড় বছর ছিলাম ওই শাখায়। তখন জানতে পারলাম নওগাঁ তে আমাদের শাখা আছে। এরপর ট্রান্সফার হলাম চট্টগ্রাম এর অক্সিজেন শাখায়। ওখানে কাটালাম আরও দেড় বছর। খবর পেতে শুরু করলাম এবার যেতে হবে নওগাঁয়।
০১ জুলাই ২০১১ থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হল নওগাঁ জোনের। জুন ২০১১ তেই বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। কিছুটা বিব্রত বোধ করছিলাম। কারন অনেক দূর, অচেনা জয়গা, অজানা পরিবেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ দেখার সুযোগ, বাংলার উত্তরবঙ্গ দেখার হাতছানি। তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এবং বেক্তিগতভাবে নিকটজনরা আমাকে উৎসাহিত করল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, যাব এবং যেতে হবে। কিন্তু বাধ সাধল আমার পরিবার। আমি মা বাবার একমাত্র ছেলে, ছোট বেলা থেকে কাছে কাছে রেখে আমাকে বড় করেছে, তাই তাঁরা বিষয়টি জানা মাত্র জোরে শোরে আমাকে নিরুৎসাহিত করতে থাকল। তাছাড়া, আমার কুমিল্লা জীবনের অভিজ্ঞতা উনাদের কাছে তেমন একটা সুখকর ছিল না। আমার বাবা সরাসরি বলে দিয়েছিলেন, দরকার নেই, এতদূরে যাবার কোন দরকার নেই। কিন্তু তখন আমি আর থামার পাত্র ছিলাম না। উপায়ান্তর না দেখে আমার বাবা আমার অতি প্রিয় ছোট ভাই "তাপস" এর সাথে কথা বললেন, আমাকে বুঝাতে বললেন। ১০ মিনিট ফোনে কথা বলেই আমি তাপস কে সরাসরি বোল্ড করে দিলাম এবং মাকে সরাসরি বলে দিলাম, আমি যাব এবং এটাই আমার শেষ কথা।
০১ জুলাই ২০১১ ছিল শুক্রবার তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠবো এবং শনিবার সকালে নওগাঁ পৌঁছব। কয়েকদিন আগেই "শ্যামলী" পরিবহনে সিট বুক দিয়ে রেখেছিলাম। বৃহস্পতিবার অক্সিজেন শাখার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি আসলাম। বাড়িতে তখন ১০ নং মহাবিপদ সংকেত চলছিল। মার সাথে ভয়ে ভয়ে একটু একটু কথাবার্তা বলছিলাম কিন্তু বাবার চোখের দিয়ে তাকাতে পারছিলাম না। মাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম, শুক্রবার দুপুরের ভাত খেয়ে চট্টগ্রাম চলে যাব, সেখান থেকে সন্ধ্যায় নওগাঁর গাড়িতে উঠবো। কথামত মা বাবার পায়ে ধরে প্রনাম করে শুক্রবার ১/২ টার দিকে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশে রওনা দিলাম। মেসে কিছুক্ষন রেস্ট করে চলে গেলাম গরীব উল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন শ্যামলী কাউনটারে। আমাকে বিদায় জানাতে এসেছিল সোহেল ভাই, অ্যাপোলো, সঞ্জয়, জাহাঙ্গির সহ আরও বেশ কিছু ফ্রেন্ড। সন্ধ্যা ৭ টা। গাড়িতে উঠার পর বুকটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালাম প্রিয় চট্টগ্রাম শহরকে। ফোনে দোয়া চেয়ে নিলাম সকল বস এর কাছ থেকে।
শ্যামলী যখন হাইওয়ে ধরে ছুটে চলছিল আমি কেমন যেন স্মৃতিকাতর হয়ে যাচ্ছিলাম। চট্টগ্রাম এ কাটানো সময়গুলো বেশ মনে পড়ছিল। মাঝে একবার মেজো মামার ফোন আসল, খুব বকা ঝকা করলেন, শেষ পর্যন্ত নওগাঁ যাচ্ছি শুনে। গ্রিনভিউ তে রাতের খাবার শেষে গাড়ি আবার ছুটে চলল, ঘুমিয়ে পড়লাম। একবার ঘুম ভাঙল, দেখলাম ঢাকা পার হচ্ছি---- আমার চেনার শেষ সীমানা, আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ ঝলমল আলো চোখে পড়ায় আবার যখন ঘুম ভাঙল তখন আমি পুলকিত হলাম। কারন তখন আমি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ "যমুনা সেতু" র উপরে। ঘুমকাতর দু চোখ মেলে দেখে নিলাম বাংলার এই অপরূপ কৃত্রিম সৌন্দর্য। সকাল ৭ টার দিকে পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত "নওগাঁ"য়।
তাজুল ভাই (বর্তমানে ঘাসফুল এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার) এর সাথে ফোন কথা বলে আমাদের নওগাঁ অফিসের ঠিকানা জেনে নিলাম। অফিসে ঢুকে প্রথম দেখা হয়েছিল "আনিসার" এর সাথে, এরপর অখিল এর সাথে। ব্যাগ রেখে বেরিয়ে পড়লাম নাস্তা করার জন্য, পেট তখন চোঁ চোঁ করছিল। অচেনা শহরে অনেক ঘুরেও একটা হোটেল খুঁজে পেতে ব্যারথ হয়ে একটা কনফেকশনারি দোকানে গিয়ে এক পিস কেক ও এক গ্লাস পানি খেলাম। আমার নওগাঁর বস শামসুল ভাই তখন অফিসের কাজে ঢাকায় ছিলেন। ফোন তাঁকে আমার আগমন সংবাদ জানালাম। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করলেন। আবার নওগাঁ অফিসে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর নওগাঁর ম্যানেজার আনোয়ার ভাই আসলেন, তাঁকে নিয়ে চলে গেলাম এস এ পরিবহনে যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আমার প্রিয় বাইক "CRUX"। নওগাঁ সদর থেকে আনোয়ার ভাই আমাকে পৌঁছে দিলেন আমার ওয়ার্ক Station "চৌমাশিয়া"তে। দেখা হল একরামুল ভাই সহ আরও কয়েকজনের সাথে। সকল ম্যানেজার এর সাথে ফোনে পরিচিত হয়ে, কিছু হাতের কাজ করে ওই দিন শেষ করলাম। সন্ধ্যায় অফিসে আমার জন্য নির্ধারিত থাকার ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কেমন যেন অনুভব হচ্ছিল, খুব মনে হচ্ছিল আমি অনেক দূরে, অনেক দূরে চলে এসেছি, মনের অজান্তে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম।
বস ঢাকা থেকে আসার পর একটা পরিচিতি সভা করেছিলাম, যেখানে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ জোনের সকল ম্যানেজার - মাহাবুব ভাই, আনোয়ার ভাই, কামাল ভাই, একরামুল ভাই, ফরহাদ ভাই, মাসুদ ভাই ও জেসাদুল ভাই। বস শামসুল ভাই আমাকে ঘুরিয়ে আনলেন সকল শাখা থেকে, পরিচয় করিয়ে দিলেন সকল শাখার স্টাফ দের সাথে - যাদের সাথে শুরু হল আমার নতুন পথচলা। শুরু হল আমার "নওগাঁ জীবন"।
সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করাই ছিল আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ। অল্প দিনেই উতরে গিয়েছিলাম। এরপর শুধু কাজ আর কাজ। প্রিয় "CRUX" নিয়ে দৌড়াতে থাকলাম নিয়ামতপুর, নওগাঁ সদর, সতীহাট, জিনারপুর, পত্নীতলা, সাপাহার উপজেলায়। মাসে একবার করে বাড়ি যাবার অভ্যাস করে নিলাম। কখনো ভাল, কখনো খারাপ, কখনো আনন্দ, কখনো বেদনা, এভাবেই কেটে যেতে লাগল নওগাঁর দিন গুলো।
নওগাঁর মানুষদের আমার খুব ভাল লেগেছে, খুব আন্তরিক। যদিও একটু দেরিতে বুঝে, তবে বুঝালে বুঝার চেষ্টা করে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইতিমধ্যে ঘুরে ফেলেছি ঐতিহাসিক নওগাঁর "পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার" "শাহনেওয়াজ পার্ক", সাপাহার এর "দিবর দীঘি", বলিহার এর "রাজবাড়ি", দুবলহাটি "রাজবাড়ি", পতিসর এর "রবিন্দ্র কুঠিবাড়ি", মান্দার "কুসুম্বা মসজিদ", নাটোর এর "উত্তরা গনভবন", কুষ্ঠিয়ার "রবিন্দ্র কুঠিবাড়ি", কুষ্ঠিয়ার "লালন আখড়া", বগুড়ার "মহাস্থান গড়", "মহাস্থান মাজার", "বেহুলা লক্ষিন্দর এর বাসর ঘর", রাজশাহীর "পদ্মা পাড়", "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়" সহ অনেক দর্শনীয় স্থান।
আজ নিশ্চিত হলাম ০১ জুলাই ২০১৩ থেকে আমাকে ফেনী অঞ্চল এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছেড়ে যেতে হবে নওগাঁ। শুরু করতে হবে নতুন পথ চলা। কিন্তু ছোট্ট শহর নওগাঁকে কখনো ভুলতে পারব না। ভুলতে পারব না, আমার নওগাঁর সকল সহকর্মীদের।
"ঘাসফুল" এ আমি যোগদান করি ১২.৪.২০০৮ তারিখে, অনেকটা হঠাৎ করেই। ঘাসফুল এ আমার প্রথম পোস্টিং চট্টগ্রাম এর মাদারবাড়ি ৪ নং শাখায়। টুটুল দার (বর্তমানে ঘাসফুল এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার) হাতে আমার মাইক্রো ফাইনান্স এ হাতেখড়ি। প্রায় দেড় বছর ছিলাম ওই শাখায়। তখন জানতে পারলাম নওগাঁ তে আমাদের শাখা আছে। এরপর ট্রান্সফার হলাম চট্টগ্রাম এর অক্সিজেন শাখায়। ওখানে কাটালাম আরও দেড় বছর। খবর পেতে শুরু করলাম এবার যেতে হবে নওগাঁয়।
০১ জুলাই ২০১১ থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হল নওগাঁ জোনের। জুন ২০১১ তেই বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। কিছুটা বিব্রত বোধ করছিলাম। কারন অনেক দূর, অচেনা জয়গা, অজানা পরিবেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ দেখার সুযোগ, বাংলার উত্তরবঙ্গ দেখার হাতছানি। তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এবং বেক্তিগতভাবে নিকটজনরা আমাকে উৎসাহিত করল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, যাব এবং যেতে হবে। কিন্তু বাধ সাধল আমার পরিবার। আমি মা বাবার একমাত্র ছেলে, ছোট বেলা থেকে কাছে কাছে রেখে আমাকে বড় করেছে, তাই তাঁরা বিষয়টি জানা মাত্র জোরে শোরে আমাকে নিরুৎসাহিত করতে থাকল। তাছাড়া, আমার কুমিল্লা জীবনের অভিজ্ঞতা উনাদের কাছে তেমন একটা সুখকর ছিল না। আমার বাবা সরাসরি বলে দিয়েছিলেন, দরকার নেই, এতদূরে যাবার কোন দরকার নেই। কিন্তু তখন আমি আর থামার পাত্র ছিলাম না। উপায়ান্তর না দেখে আমার বাবা আমার অতি প্রিয় ছোট ভাই "তাপস" এর সাথে কথা বললেন, আমাকে বুঝাতে বললেন। ১০ মিনিট ফোনে কথা বলেই আমি তাপস কে সরাসরি বোল্ড করে দিলাম এবং মাকে সরাসরি বলে দিলাম, আমি যাব এবং এটাই আমার শেষ কথা।
০১ জুলাই ২০১১ ছিল শুক্রবার তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠবো এবং শনিবার সকালে নওগাঁ পৌঁছব। কয়েকদিন আগেই "শ্যামলী" পরিবহনে সিট বুক দিয়ে রেখেছিলাম। বৃহস্পতিবার অক্সিজেন শাখার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি আসলাম। বাড়িতে তখন ১০ নং মহাবিপদ সংকেত চলছিল। মার সাথে ভয়ে ভয়ে একটু একটু কথাবার্তা বলছিলাম কিন্তু বাবার চোখের দিয়ে তাকাতে পারছিলাম না। মাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম, শুক্রবার দুপুরের ভাত খেয়ে চট্টগ্রাম চলে যাব, সেখান থেকে সন্ধ্যায় নওগাঁর গাড়িতে উঠবো। কথামত মা বাবার পায়ে ধরে প্রনাম করে শুক্রবার ১/২ টার দিকে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশে রওনা দিলাম। মেসে কিছুক্ষন রেস্ট করে চলে গেলাম গরীব উল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন শ্যামলী কাউনটারে। আমাকে বিদায় জানাতে এসেছিল সোহেল ভাই, অ্যাপোলো, সঞ্জয়, জাহাঙ্গির সহ আরও বেশ কিছু ফ্রেন্ড। সন্ধ্যা ৭ টা। গাড়িতে উঠার পর বুকটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালাম প্রিয় চট্টগ্রাম শহরকে। ফোনে দোয়া চেয়ে নিলাম সকল বস এর কাছ থেকে।
শ্যামলী যখন হাইওয়ে ধরে ছুটে চলছিল আমি কেমন যেন স্মৃতিকাতর হয়ে যাচ্ছিলাম। চট্টগ্রাম এ কাটানো সময়গুলো বেশ মনে পড়ছিল। মাঝে একবার মেজো মামার ফোন আসল, খুব বকা ঝকা করলেন, শেষ পর্যন্ত নওগাঁ যাচ্ছি শুনে। গ্রিনভিউ তে রাতের খাবার শেষে গাড়ি আবার ছুটে চলল, ঘুমিয়ে পড়লাম। একবার ঘুম ভাঙল, দেখলাম ঢাকা পার হচ্ছি---- আমার চেনার শেষ সীমানা, আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ ঝলমল আলো চোখে পড়ায় আবার যখন ঘুম ভাঙল তখন আমি পুলকিত হলাম। কারন তখন আমি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ "যমুনা সেতু" র উপরে। ঘুমকাতর দু চোখ মেলে দেখে নিলাম বাংলার এই অপরূপ কৃত্রিম সৌন্দর্য। সকাল ৭ টার দিকে পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত "নওগাঁ"য়।
তাজুল ভাই (বর্তমানে ঘাসফুল এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার) এর সাথে ফোন কথা বলে আমাদের নওগাঁ অফিসের ঠিকানা জেনে নিলাম। অফিসে ঢুকে প্রথম দেখা হয়েছিল "আনিসার" এর সাথে, এরপর অখিল এর সাথে। ব্যাগ রেখে বেরিয়ে পড়লাম নাস্তা করার জন্য, পেট তখন চোঁ চোঁ করছিল। অচেনা শহরে অনেক ঘুরেও একটা হোটেল খুঁজে পেতে ব্যারথ হয়ে একটা কনফেকশনারি দোকানে গিয়ে এক পিস কেক ও এক গ্লাস পানি খেলাম। আমার নওগাঁর বস শামসুল ভাই তখন অফিসের কাজে ঢাকায় ছিলেন। ফোন তাঁকে আমার আগমন সংবাদ জানালাম। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করলেন। আবার নওগাঁ অফিসে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর নওগাঁর ম্যানেজার আনোয়ার ভাই আসলেন, তাঁকে নিয়ে চলে গেলাম এস এ পরিবহনে যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আমার প্রিয় বাইক "CRUX"। নওগাঁ সদর থেকে আনোয়ার ভাই আমাকে পৌঁছে দিলেন আমার ওয়ার্ক Station "চৌমাশিয়া"তে। দেখা হল একরামুল ভাই সহ আরও কয়েকজনের সাথে। সকল ম্যানেজার এর সাথে ফোনে পরিচিত হয়ে, কিছু হাতের কাজ করে ওই দিন শেষ করলাম। সন্ধ্যায় অফিসে আমার জন্য নির্ধারিত থাকার ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কেমন যেন অনুভব হচ্ছিল, খুব মনে হচ্ছিল আমি অনেক দূরে, অনেক দূরে চলে এসেছি, মনের অজান্তে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম।
বস ঢাকা থেকে আসার পর একটা পরিচিতি সভা করেছিলাম, যেখানে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ জোনের সকল ম্যানেজার - মাহাবুব ভাই, আনোয়ার ভাই, কামাল ভাই, একরামুল ভাই, ফরহাদ ভাই, মাসুদ ভাই ও জেসাদুল ভাই। বস শামসুল ভাই আমাকে ঘুরিয়ে আনলেন সকল শাখা থেকে, পরিচয় করিয়ে দিলেন সকল শাখার স্টাফ দের সাথে - যাদের সাথে শুরু হল আমার নতুন পথচলা। শুরু হল আমার "নওগাঁ জীবন"।
সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করাই ছিল আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ। অল্প দিনেই উতরে গিয়েছিলাম। এরপর শুধু কাজ আর কাজ। প্রিয় "CRUX" নিয়ে দৌড়াতে থাকলাম নিয়ামতপুর, নওগাঁ সদর, সতীহাট, জিনারপুর, পত্নীতলা, সাপাহার উপজেলায়। মাসে একবার করে বাড়ি যাবার অভ্যাস করে নিলাম। কখনো ভাল, কখনো খারাপ, কখনো আনন্দ, কখনো বেদনা, এভাবেই কেটে যেতে লাগল নওগাঁর দিন গুলো।
নওগাঁর মানুষদের আমার খুব ভাল লেগেছে, খুব আন্তরিক। যদিও একটু দেরিতে বুঝে, তবে বুঝালে বুঝার চেষ্টা করে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইতিমধ্যে ঘুরে ফেলেছি ঐতিহাসিক নওগাঁর "পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার" "শাহনেওয়াজ পার্ক", সাপাহার এর "দিবর দীঘি", বলিহার এর "রাজবাড়ি", দুবলহাটি "রাজবাড়ি", পতিসর এর "রবিন্দ্র কুঠিবাড়ি", মান্দার "কুসুম্বা মসজিদ", নাটোর এর "উত্তরা গনভবন", কুষ্ঠিয়ার "রবিন্দ্র কুঠিবাড়ি", কুষ্ঠিয়ার "লালন আখড়া", বগুড়ার "মহাস্থান গড়", "মহাস্থান মাজার", "বেহুলা লক্ষিন্দর এর বাসর ঘর", রাজশাহীর "পদ্মা পাড়", "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়" সহ অনেক দর্শনীয় স্থান।
আজ নিশ্চিত হলাম ০১ জুলাই ২০১৩ থেকে আমাকে ফেনী অঞ্চল এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছেড়ে যেতে হবে নওগাঁ। শুরু করতে হবে নতুন পথ চলা। কিন্তু ছোট্ট শহর নওগাঁকে কখনো ভুলতে পারব না। ভুলতে পারব না, আমার নওগাঁর সকল সহকর্মীদের।
হাসির sms
ReplyDelete