Friday, June 14, 2013

একটি নাম্বারই হোক আমাদের পরিচয়

বাংলাদেশে সকল নাগরিকের তথ্য কি সরকারের কাছে আছে? ধরুন কোথাও একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, জনৈক "আবুল" ঘটনাটির জন্য দায়ি বলে জানা গেল। সরকারের উচ্চ পর্যায় তো দূরের কথা, নিকটস্থ থানায় গিয়েও উক্ত আবুল সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোন তথ্য আপনি পাবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আরেকটি বিষয়, মাঝে মাঝে আমরা জানতে পারি অমুক প্রতিষ্ঠান হতে একজন অফিসার এর চাকরী চলে গেছে। কারণ জানতে গিয়ে জানতে পারি, তার সার্টিফিকেট জাল ছিল। হয়তো এমন হাজারো অমুক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেনামে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে বহাল তবিয়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কাছে কি এদের সনাক্ত করার কোন উপায় আছে? এমন হাজারো ঘটনা আছে, যেখানে শুধুমাত্র একজন লোককে সনাক্ত করা গেলে সব সমস্যার সমাধান করা যেত।

একটি মাত্র নাম্বার ব্যাবহার করে খুব সহজেই আমাদের দেশের সকল মানুষের একটি Identity তৈরি করা সম্ভব। যা একটি ডাটা ব্যাংক হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগে থাকতে পারে। কিভাবে? নিচে আলোচনা করলাম-

প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে "জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান বোর্ড" নামে একটি করে শাখা রাখা যেতে পারে। ওই বোর্ডই সকল কাজ করবে। ওই বোর্ড মাঠ পর্যায়ে তদারকির মাধ্যমে জন্মের পর পরই সকল শিশুর জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করবে। ওই জন্ম নিবন্ধন ফরমে একটি ২১ ডিজিট এর নাম্বার বসানো হবে। একটি নাম্বার শুধুমাত্র একজনের জন্যই ব্যাবহার করা হবে। জন্ম নিবন্ধন ফরমে উক্ত শিশুর আনুষাঙ্গিক তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করে এক কপি শিশুর মা বাবা কে দেয়া হবে আরেক কপি ডাটা ব্যাংক এর জন্ম নিবন্ধন অংশে সংরক্ষিত হয়ে যাবে। টিকা দান কর্মসূচি সহ বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচি তে অংশগ্রহন করার সময় সকল শিশু/তাদের মা বাবা ওই জন্ম নিবন্ধন ফরমটি সাথে নিয়ে আসবে। কর্তৃপক্ষ অংশগ্রহণকারীদের জন্ম নিবন্ধন ফরমের নাম্বারটি সংগ্রহ করবেন, যাতে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন যে কি পরিমান শিশু ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করল ও কারা বাদ পড়ল এবং বাদ পড়াদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। যেহেতু বিষয়টি ইউনিয়ন ভিত্তিক হবে তাই কোন শিশু যদি মা বাবার চাকুরীর সুবাদে বা অন্য কোন কারণে এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলে যায় তাহলে উক্ত বোর্ডে বিষয়টি অবহিত করবে এবং বোর্ড ওই ঠিকানা ট্রান্সফার করবে, যেখানে ট্রান্সফার করবে সেখানে যাবার পর ওই ইউ পি বোর্ড তার ঠিকানা সহ সকল তথ্য নবায়ন করে নিবে।

শিশুর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে সে জন্ম নিবন্ধন ফরমটি নিয়ে তার ইউনিয়ন পরিষদের "জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান বোর্ড" এ যাবে, বোর্ড তার বয়স পরীক্ষা করে তাকে একটি জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করবে এবং তার সকল তথ্য ডাটা ব্যাংক এর জাতীয় পরিচয় পত্র অংশে ট্রান্সফার করবে। এখনে উল্লেখ্য যে, জন্ম নিবন্ধন ফরমে যে ২১ ডিজিটের নাম্বার টা তাকে দেয়া হয়েছিল, সেই নাম্বারটিই তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার হবে। সে যখন যে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে বসবাস করবে, বোর্ডের মাধ্যমে তার সকল তথ্য ওই ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ডাটা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকবে।

এবার দেখা যাক, একটি নাম্বার কিভাবে একজনের সকল পরিচয় হতে পারে। বিষয়টি খুব সিম্পল। জাতীয় পরিচয় পত্রের ২১ ডিজিট এর নাম্বারটি সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে ব্যবহারিত হবে। যেমনঃ ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বারটিই হবে যে কারো এস এস সি সহ সকল পাবলিক পরীক্ষার রোল নাম্বার, ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বারটিই হবে যে কারো গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বারটিই হবে যে কারো বন্দুকের লাইসেন্স নাম্বার, ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বারটিই হবে যে কারো মোবাইল নাম্বার, ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বারটিই হবে যে কারো ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার, ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বারটিই হবে যে কারো TIN নাম্বার, ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বারটিই হবে যে কারো চাকুরী ক্ষেত্রে পরিচয় পত্র নাম্বার। এক্ষেত্রে কেউ যদি একাধিক গাড়ি বা বন্দুক বা মোবাইল ব্যাবহার করে তাহলে ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বার এর পর যথাক্রমে ১, ২ এভাবে যুক্ত করা হবে।  অর্থাৎ প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে ওই ২১ ডিজিট এর নাম্বার টাই হবে একজন ব্যক্তির Identity।

তাহলে আর কেউ দুর্ঘটনা করে পালিয়ে থাকতে পারবে না, আর কেউ জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী করতে পারবে না, আর কেউ চোরাই গাড়ি ব্যাবহার করতে পারবে না, আর কেউ বে নামে মোবাইল সিম কিনে আপনাকে আমাকে ধমক দিতে পারবে না, আদম শুমারির নামে আর আমাদের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য পেতে হবে না ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।          

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন এর অধীনে ওই বোর্ড পরিচালিত হবে।

> ব্যক্তিগত মতামত মাত্র।

Post Comment

No comments:

Post a Comment