বাংলাদেশ এর ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস গৌরবের। ছাত্ররাই বাংলাদেশকে অনেক কিছু এনে দিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশ এর ছাত্ররা নিজের প্রাণকে তুচ্ছ করে নিজের দেশের স্বাধীনতার জন্য এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েনি।যতবারই আমাদের প্রিয় 'বাংলা' ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে, ততবারই ত্রাতা হিসেবে বাংলার ছাত্ররাই আবির্ভূত হয়েছে। যে রাজনীতিবিদের ছাত্র রাজনীতি করার ইতিহাস নেই, সেই রাজনীতিবিদকে রাজনীতির মাঠের পাকা খেলোয়াড় মনে করা হয় না।
বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' তে পড়েছি, বঙ্গবন্ধু যখন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রনেতা ছিলেন, তখন তাঁদের জন্য নিয়মিত রাজনৈতিক ক্লাস হত। প্রতি সপ্তাহে বা মাসে একবার মূল দলের বড় বড় নেতারা আসতেন এবং ছাত্র নেতা-কর্মীদের প্রতি সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, নৈতিক শিক্ষামূলক বক্তব্য দিতেন। ছাত্র নেতা-কর্মীরা শিখতেন এবং তাদের অনুসারীদের শিখাতেন। এখন সেই সংস্কৃতি নেই কেন? বড় নেতারা যদি ছাত্র নেতা-কর্মীদের শেখানোর উদ্যোগ না নেন, তবে ছাত্র নেতা কর্মীরা কিভাবে শিখবে? কিভাবেই বা তারা সাধারন শিক্ষার্থীদের নিজের প্রতি বা নিজের আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট করবে? আর ভবিষ্যতে তারা যখন মূল দলের নেতা হবে, তখনই বা তারা নতুন প্রজন্মকে কতটুকু শিখাতে পারবে? শুধুমাত্র একটা জায়গায় ঘাটতির কারনে আমাদের সমগ্র ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। ছাত্ররা রাজনীতি করবে এবং তাদের সযত্নে গড়ে তুলতে হবে। তাদের শিখাতে হবে, তাদের শিখার সুযোগ করে দিতে হবে।
মাদক শুধুমাত্র ছাত্র বা ছাত্র রাজনীতির জন্য নয় বরং সমগ্র জাতির জন্য একটি বড় হুমকি। আমার মনে মাঝে মাঝে একটি প্রশ্ন জাগে। প্রশাসন চাইলে কি বাংলাদেশকে মাদক মুক্ত করা অসম্ভব? কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে অসম্ভবই মনে হচ্ছে। জানি না, ঘাটতিটা কোথায়? এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না। কারন এ ব্যাপারে কম বেশি প্রায় সবাই জানে।
বর্তমানকালে মেধাবী কোন ছাত্র সাধারণত রাজনীতিতে জড়াতে চায় না এবং কোন মেধাবী ছাত্রের মা বাবাও চায় না যে, তাঁদের সন্তানটি রাজনীতিতে জড়িয়ে নষ্ট হয়ে যাক! রাজনীতিতে জড়ালে সন্তান নষ্ট হবে, বিষয়টি কি অযৌক্তিক? একবার মনে হয় অবশ্যই অযৌক্তিক কিন্তু আবার নিজেই সন্দিহান হয়ে যাই। আজকাল আমরা কি দেখছি? রাজনীতির নামে কি করে একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে খুন করে? কি করে ছাত্র নেতা- কর্মীরা একটি মেয়েকে উত্যক্ত করতে পারে? কিভাবে ছাত্র নেতা -কর্মীরা চাঁদাবাজি করে? কিভাবে ছাত্র নেতা- কর্মীরা বাবার সমবয়সী একজন ব্যক্তির সাথে অসদাচরন করে; এমনকি তাঁর গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতে পারে? তারা কি ছাত্র রাজনীতির আদর্শ জানে বা মানে? তারা কাদের আদর্শের অনুসারী? তাদের কারা লালন পালন করে? কি লক্ষ্যে তাদের লালন পালন করা হয়? তাদের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ কি? পরিবার বা সমাজ বা দেশকে তারা কি-ই বা দিতে পারবে? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে যে কারো কাছে মনে হতে পারে যে রাজনীতিতে জড়ালে সন্তান নষ্ট হতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি এভাবেই চলতে থাকবে? আমি বিশ্বাস করি, অবশ্যই না। আমাদের বাংলাদেশের মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোতে এখনো এমন বেশ কিছু বড় মাপের নেতা আছেন, যারা সত্যিকারের ছাত্র নেতা ছিলেন। তাঁরা কেউ কেউ আজ কোন বড় দলকে আবার কেউবা দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আশু উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। তাঁরা যদি চান তাঁদের সময়কার মত সত্যিকারের ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে, তাঁরা পারবেন। হয়তো কষ্টকর হবে তবে অসাধ্য হবে না। যে যত বড় গুন্ডা, সে তত বড় নেতা। যে যত বেশি বেয়াদব, সে বড় নেতার তত বেশি প্রিয়ভাজন। এই ইদানিংকালের প্রচলিত ধারনাগুলোর কবর রচনা করতে হবে। ছাত্র রাজনীতির মাঠে শিক্ষাকে মূল্যায়ন করতে হবে, মেধাকে মূল্যায়ন করতে হবে, সদাচারনকে মূল্যায়ন করতে হবে, বিনয়কে মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই মেধাবী ছাত্ররা রাজনীতির প্রতি উৎসাহিত হবে। মা বাবা গর্ব করে বলবে, আমার সন্তান শুধু ভাল ছাত্রই নয় বরং সে ছাত্র-রাজনীতিও করে।
সকল কথার শেষ কথা, প্রাপ্তন ছাত্র নেতা এবং প্রকৃত রাজনীতিবিদদের এখনই এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্র রাজনীতির যথাযথ ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ সচল করতে হবে। মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। সত্যিকারের ছাত্রদেরই ছাত্র নেতা বানাতে হবে। ছাত্র রাজনীতির সকল জঞ্জাল এখনই পরিষ্কার করতে হবে। এসব না করা গেলে ভবিষ্যৎ এ আমরা জাতি হিসেবে ঢাল তলোয়ার বিহীন নিধিরাম সর্দার এ পরিনত হব। ব্যবসায়ী, পুঁজিবাদ, মাদক সম্রাট, অর্ধ শিক্ষিতরা আমাদের জাতিকে নেতৃত্ব দিবে। তাই বলতে চাই, প্রিয় ছাত্ররা- তোমরা মন দিয়ে লেখাপড়া কর, নৈতিকতা অবলম্বন কর, বিনয়ী হও, দেশকে ভালবাস, রাজনীতি কর। তোমরাই আমাদের অবলম্বন, তোমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তোমরাই আমাদের মুক্তির সারথি।
------------------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment