Thursday, April 30, 2020

মতলব আলী ও কুদরত আলীর কথোপকথন


০১. পাড়ার মোড়ের রাস্তায়

মতলবঃ কিরে কুদরত, কোথায় যাচ্ছিস? আজকাল তোকে তেমন দেখাই যায় না। ঘটনা কি?

কুদরতঃ ভাই, বাজারে যাচ্ছি। একটু বাজার করবো। ভালো আছি ভাই। মিল্লাত ভাইয়ের সাথে সবসময় থাকি তো, তাই আপনার সাথে কম দেখা হয়।

মতলবঃ আচ্ছা, বাদ দে। এখন থেকে ভাইকে সময় দিতে হবে। তোকে তো একটা সুখবর বলি নাই।

কুদরতঃ কি সুখবর ভাই? আবার বিয়ে করবেন নাকি?

মতলবঃ দূর ব্যাটা। দিলি তো মুডটা অফ করে। এখন আর তোর সাথে কথা বলবো না। সন্ধ্যার পর বাসায় আসিস, বিস্তারিত আলাপ করবো।

কুদরতঃ ভাই, সন্ধ্যার পর মিল্লাত ভাইয়ের সাথে থাকতে হয়। কিভাবে আপনার বাসায় আসবো।

মতলবঃ তুই একটা উন্নত জাতের বোকা। মতলব আলীর তলবকে তুই এখনো গুরুত্ব দিতে শিখিস নাই। চলে আসিস ব্যাটা। কাল থেকে মিল্লাতকে আর তোর প্রয়োজন হবে না।

কুদরতঃ আচ্ছা আসবো ভাই।

০২. মতলব আলীর বাসায়

মতলবঃ শোন, যে কারণে তোকে আসতে বলা।

কুদরতঃ জ্বী ভাই।

মতলবঃ আমিতো মাতব্বরি'তে নামবো ঠিক করেছি। পূর্ব পাড়ার চৌধুরীদের সাথে আমাদের পাড়ার মন্ডলদের একটা ঝামেলা শুরু হয়েছে। জানিস তো? দু'চারদিনের মধ্যে একটা বড় গন্ডগোল বাঁধবে বলে ধারনা করা যায়।

কুদরতঃ হ্যাঁ, তাতো জানি। অবস্থা ভালো ঠেকছে না, মিল্লাত ভাইরা প্রতিদিন এসব নিয়ে আলোচনা করে। উভয় পক্ষ যে পরিমাণ বেপরোয়া। কি যে হবে! কিন্তু এর সাথে আপনার মাতব্বর হওয়ার সম্পর্ক কি? ঠিক বুঝতে পারলাম না।

মতলবঃ হা হা হা হা, মতলব আমার নাম; মতলব ছাড়া আমি করি না কোন কাম। শোন কুদরত, পূর্ব পাড়ার চৌধুরীদের সাথে আমাদের পাড়ার মন্ডলদের গন্ডগোলটা ফাইনলি বেঁধেই গেলে পূর্ব পাড়ার সকল মানুষ চৌধুরীদের পক্ষ নিয়ে আর আমাদের পাড়ার সকল মানুষ মন্ডলদের পক্ষ নিয়ে লড়াইয়ে নামবে না?

কুদরতঃ হ্যাঁ, অবশ্যই লড়াইয়ে নামবে। যার যার পাড়ার সম্মান বলে কথা। আমিও নামবো, মিল্লাত ভাইও নামবে, আপনিও নামবেন।

মতলবঃ না, আমি লড়াইয়ে নামবো না।

কুদরতঃ কি বলেন আপনি! তো, আপনি কি করবেন?

মতলবঃ ঐ যে বললাম, আমি মাতব্বর হবো।

কুদরতঃ ভাই, বুঝিয়ে বলেন।

মতলবঃ দুই পাড়ার লড়াইয়ে অনেকে আহত হবে না? অনেকের বাড়িঘর, দোকান পাট ভেঙে যাবে না? অনেক অনেক ফসল নষ্ট হবে না? অনেক মানুষের আয় বন্ধ হয়ে যাবে না? অনেকে চিকিৎসার অভাবে, না খেয়ে মারা যাবে না?

কুদরতঃ তা তো ঠিকি বলেছেন।

মতলবঃ আর তখনই চালিয়ে দেব আমি আমার মতলব।

কুদরতঃ বুঝলাম না।

মতলবঃ আমি আমাদের পাড়ার আসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবো। যারা না খেয়ে থাকবে, তাদের খাবার দেবো; যাদের ঘর-দোকান ভেঙে যাবে, তাদের ঘর করে দেব; যারা আহত হবে, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো.............

কুদরতঃ কিন্তু এত টাকা আপনি কোথায় পাবেন? মানুষের খেদমতে কি আপনি জমি বিক্রি করবেন?

মতলবঃ দূর বোকা, জমি কেন বিক্রি করবো? আজকাল টাকার অভাব হয় না। বাতাসে টাকা উড়ে, শুধু ধরতে জানতে হয়। আমি বাতাস থেকে টাকা ধরে নেব, আর তা দিয়ে আমাদের পাড়ার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবো।

কুদরতঃ ভাই, আপনি মহান। আমি আর মিল্লাত ভাইয়ের কাছে যাবো না। আমাকে আপনার পাশেপাশে রাখবেন ভাই। এইসব কাজে সাথে থাকলেও ছওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু ভাই, আপনি যদি মন্ডলদের পক্ষে লড়াইয়ে না যান, গ্রামবাসী আপনাকে বাঁকা চোখে দেখবে না?

মতলবঃ আরে ওই পরিকল্পনা আমি করে রেখেছি। প্রথমদিনই লড়াইয়ের মাঠে গিয়ে মাইল্ড হার্ট অ্যাটাকের ভান করবো। ডাক্তার কন্ট্রাক করা আছে। এরপর লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে জনসেবায় নেমে যাব। তখন তোর মতো সমগ্র এলাকাবাসী আমাকে মহান বলবে৷ আর তুই আমার পাশেপাশে থাকবি, তোর হাতে থাকবে ক্যামেরা। আমার সকল 'মহান' কাজের ছবি তুলে রাখবি তুই। পরে কাজে লাগবে।

কুদরতঃ ভাই, লড়াই না হয় নাই করলেন কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ভালো কাজ। কিন্তু আপনার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে এখানেও কোন কিন্তু আছে অর্থাৎ আপনার কোন মতলব আছে।

মতলবঃ এতো কিন্তু কিন্তু করিস না। তুই তো এখন আমার লোক। তোকে ভেঙে বলি। আমি যখন সাধারণ গ্রামবাসীকে খাওয়ার দিব, আশ্রয় দিব, চিকিৎসার বন্দোবস্ত করবো; তখন গ্রামবাসী কার গুনগান গাইবে? পাড়ায় কার জনপ্রিয়তা বাড়বে। পাড়ার লোকজন কার কথা শুনবে? কার কথায় তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে?

কুদরতঃ অবশ্যই আপনার।

মতলবঃ তাহলে বল্, মাতব্বরি করতে আমার কি আর কোন বাঁধা থাকবে?

কুদরতঃ ও এই তাহলে আপনার আসল মতলব! ভাই আপনি একটা জিনিস।

মতলবঃ ওরে জাতে উঠতে চাই; জিনিস বলিস না, বল জিনিয়াস। আর এখন যা, কাল সকাল সকাল চলে আসিস। কাল থেকে কাজে লেগে যেতে হবে।

কুদরতঃ জ্বী, ভাই৷ মতলব ভাই জিন্দাবাদ। তবে মতলব টা বাদ দিয়ে যদি কাজগুলো করতে পারতেন!

Post Comment

No comments:

Post a Comment