এটি "শুভাজিত ভৌমিক" এর লেখা। শেয়ার করার তাগিদ অনুভব করাতে শেয়ার করলাম। লেখকের সাথে যোগাযোগ বা পরিচয় না থাকায় অনুমতি নিতে পারলাম না, তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। শিরোনাম ছাড়া বাকি পুরো লেখাটি হুবুহু নিচে কপি করলাম -
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
১৭
মাসের শিশু ধর্ষিত হওয়াতে আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেলো, নারীর কাপড়ের ওপর
ধর্ষণ নির্ভর করে না। নির্ভর করে ধর্ষকের কুৎসিত মানসিকতার ওপর। প্রশ্ন
হচ্ছে, এই ধর্ষকগুলোর কীভাবে এতো নীচুমাপের ধর্ষকামী মানসিকতা তৈরি হলো ?
কী কারণে ১৭ মাসের একটা শিশুও রেহাই পেলো না ধর্ষণের কবল থেকে ? বিষয়টা
কিছুটা বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজন আছে।
প্রকৃতি চায় তার সন্তান
প্রাণীকূল পৃথিবীতে টিকে থাকুক। সেজন্য প্রকৃতি নারী পুরুষকে স্বাভাবিক
জৈবিক আকর্ষণ দিয়েছে। এই আকর্ষণ না থাকলে আমাদের প্রজননই বন্ধ হয়ে যেতো।
সেজন্য পুরুষকে দেখলে নারী এবং নারীকে দেখলে পুরুষ আকৃষ্ট হবে, এটাই
প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতাটা অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে তখনই, যখন
ধর্ষণের মতো ব্যাপার ঘটে।
প্রশ্ন উঠতেই পারেঃ বিষয়টা একমুখী কেন ?
শারীরিক আকর্ষণ দুই পক্ষের থাকলেও শুধু পুরুষরাই কেন ধর্ষণ করছে ? কেন
নারীরা ধর্ষণ করছে না পুরুষদের ?
এটার উত্তর খুঁজতে চলে যেতে হবে
অনেক পেছনে। এই দেশে মেয়েদের জন্মের পরে সে যখন একটু বড় হয়, তখনই তার প্রথম
যৌনতার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ঘটে পরিবারের চাচা, মামা, দুলাভাই, এমনকি বড়ভাইদের
করা "দুষ্টু আদরের" মাধ্যমে। হয়তো বাচ্চা মেয়েটার মা তাকে শুতে দিয়েছে
চাচার কাছে, যৌনতায় আক্রান্ত চাচা রাতের অন্ধকারে হাত বসিয়েছে ক্ষমতাহীন
বাচ্চা মেয়েটার শরীরে। ভয়ে, লজ্জায়, ঘেন্নায় বেচারা মেয়েটা কাউকে বলতে পারে
না এই ঘটনা। শুধু নিজের ভেতরেই নিজে জ্বলে পুড়ে মরতে থাকে। এরকম বহু ধর্ষণ
প্রতিরাতেই ঘটছে, কিন্তু কেউ জানতেও পারছে না।
মেয়েটা বড় হয়,
তাকে হয়তো আরবী পড়তে পাঠানো হয় কোনো হুজুরের কাছে। সুযোগ বুঝে সেই হুজুরও
একদান মেরে নেয় মেয়েটার ওপর। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে বাচ্চা মেয়ে, বমি
উটকে আসে তার। তারপরেও সে বলতে পারে না কাউকে কিছু। সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,
পাছে লোকে কিছু বলে !
এরপর তার শরীর কিছুটা বড় হয়, শুরু হয় মাসিক
ঋতুচক্র। সাথে সাথে শুরু হয় পরিবারের স্বাধীনতা হরণের পালা। বুকে কাপড় দাও,
এই দাও, সেই দাও, এই করবে না, সেই করবে না - মানে তাকে ব্রেইন ওয়াশ করে
বুঝিয়ে দেয়া হয় যে তোমার শরীরই হচ্ছে তোমার একমাত্র সম্পত্তি। এই সম্পত্তির
চূড়ান্ত রকম হেফাজত করবে এবং ভুলেও যাতে এর কোনো অংশ বাইরে প্রকাশিত না
হয়। পিরিয়ড ব্যাপারটা শারীরিকভাবে যথেষ্ট অস্বস্তিকর, এর ওপর লাগানো হয়
বিভিন্ন ধর্মীয় তকমা এবং নারী শরীরকে বানিয়ে দেয়া হয় অপবিত্র। লজ্জায়
কুঁকড়ে যায় মেয়েটি, শরীরকে তার নিজের কাছে মনে হতে থাকে অসীম ঘেন্নার বিষয়।
এরপর মেয়েটা আরেকটু বড় হয়, তার শরীর বাড়ে। জীবনের প্রয়োজনেই তাকে নেমে
আসতে হয় সাধারণ মানুষের ভিড়ে। সেখানেও শান্তি নেই। ভিড়ের মধ্যে মহাপুরুষদের
কনুই অপেক্ষা করছে তার বুক থেঁতলে দেয়ার জন্য, তার শরীরের সাথে একটু ঘষা
লাগানোর জন্য। সে পোশাক কিনতে দোকানে যায়, সেখানেও আতংক। চেঞ্জিং রুমে হয়তো
ওঁত পেতে আছে কোনো লুকানো ক্যামেরা।
ফলে একটা মেয়ে বাচ্চাকাল
থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত নিজের শরীরকে নিয়ে বিশাল অনুতাপে ভোগে,
আতংকে ভোগে, লজ্জা পায় এবং পারলে শরীরটাকে শেষ করে দিয়ে নিজে মুক্ত হতে
চায়। চারিদিকেই লজ্জা। পরিবারের মধ্যে গায়ে হাত দেয়া সেই আত্মীয়দের সামনে
লজ্জা, হুজুরদের সামনে লজ্জা, বাবা মায়ের সামনে লজ্জা, দোকানে গিয়ে প্যাড
কিনবে সেখানেও লজ্জা। এই লজ্জায় লজ্জায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে মেয়েরা।
আর
সেজন্যই মেয়েরা তাদের শরীর ব্যবহার করে ধর্ষণ করতে পারে না বা চায় না।
করবে কী করে ? শরীরকে তো সে ঘেন্না করে ! তার যোউনতার চাহিদাই নষ্ট হয়ে
যায়। পক্ষান্তরে পুরুষের শরীর এবং বিশেষ করে লিঙ্গ হচ্ছে তার অসামান্য
শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। জন্মের পরে এই এক নল দেখেই বাবা মা আনন্দে আটখানা
হয়ে ওঠেন যে, তাদের ছেলে হয়েছে। শুরু হয় সেই লিঙ্গের পূজা। সামান্য এক
প্রত্যঙ্গকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে আদরের নাম দেয়া হয়ঃ নুনু, সোনা, ধন।
ক্ষুধা লাগলে মানুষ যেমন উন্মাদ হয়ে যায় এক সময়, যা পায় তাই খায়, সেরকম
যৌনতার ক্ষুধার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পেলে পুরুষেরাও হয়ে ওঠে ধর্ষকামী। তখন
আর তার মাথায় থাকে না, যাকে সে ধর্ষণ করছে তার বয়স কতো, সে বাচ্চা না
পূর্ণাঙ্গ নারী ইত্যাদি। দীর্ঘদিন জেলবদ্ধ অপরাধী পুরুষদের নিজেদের মধ্যে
যৌনক্রিয়ার অভ্যাস সেজন্যই হতে দেখা যায়, আর সেজন্যই সতেরো মাস বয়সী বাচ্চা
ধর্ষিত হয় আর যৌনতাবঞ্চিত হুজুরেরা ছাত্রদের শরীরে হাত দিতেও দ্বিধা করেন
না।
অনেকেরই জানা নেই, আমাদের পুরুষদের যেহেতু শুক্রাণু নিয়মিত
উৎপন্ন হতেই থাকে, সেজন্য কিছুদিন পরপর শুক্রপাত না হলে রাতে ঘুমের সময় বা
রাস্তায় পথচলার সময়ও ঘর্ষণে শুক্রপাত হতে পারে। প্রকৃতি সেজন্য হস্তমৈথুনের
ব্যবস্থাও রেখেছে। হস্তমৈথুন অত্যন্ত প্রাকৃতিক এবং নির্ভেজাল একটি সাধারণ
কাজ। সবাই এই কাজটি করে এবং হাস্যকর হচ্ছে, কেউই স্বীকার করে না।
আমাদের অপর্যাপ্ত যৌনশিক্ষার জন্য আমরা সেটাকেও অস্বাস্থ্যকর এবং অপরাধ
বলে মনে করি এবং পাপবোধে ভুগি। আমাদের যৌনশিক্ষার মাধ্যমগুলো হচ্ছে বাজারের
চটি পত্রিকা, চায়ের স্টলের "রোগ জিজ্ঞাসা" থেকে শুরু করে ফার্মগেটের
ক্যানভাসার বা কলিকাতা হারবালের বিজ্ঞাপন আর জোঁকের তেলের বিক্রয়স্থল। এসব
জায়গা থেকে যৌনশিক্ষা নিলে তা যে বিপদ ছাড়া আর কিছুই ডেকে আনবে না, সেটা
বোঝা দরকার খুব তাড়াতাড়িই।
সমাজে নর-নারীর সম্পর্ক যদি সহজ এবং
স্বাভাবিক হতো, যদি যথেষ্ট যৌনশিক্ষা আমাদের স্বল্পশিক্ষিত গৃহিণী মায়েদের
থাকতো, তাহলেই আমরা আমাদের বাচ্চা মেয়েগুলোকে এটুকু শেখাতে পারতামঃ তোমার
শরীর আর সবকিছুর মতোই খুবই স্বাভাবিক, এটার ব্যবহার তুমি কীভাবে করবে সেটা
সম্পূর্ণই তোমার ইচ্ছা। তবে এমন কিছু কোরো না, যাতে তোমার শারীরিক কোনো
সমস্যা হয়। আমরা একটা ছেলেকে শেখাতে পারতাম, একটা মেয়ের শরীর তোমাকে আকর্ষণ
করবে এটাই স্বাভাবিক। তুমি তার সাথে মিলিত হও সমস্যা নেই, কিন্তু অবশ্যই
কোনো নিরোধক ব্যবহার করে। কারণ, অসময়ে গর্ভসঞ্চার ঘটলে তোমাদেরই সমস্যা
হবে।
আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের শেখাতে পারতাম, জৈবিক কারণেই একবার
মিলিত হওয়ার পর বা চুম্বনের পর তোমাদের শরীর যদি একে অপরের সাথে খাপ না
খায়, তাহলে শরীরই রেড সিগন্যাল দিবে যে, এই শরীরের সাথে আমি স্যুট করতে
পারছি না। ফলে ছেলে মেয়েদের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ চলে যাওয়ার ঘটনাটাও
প্রাকৃতিক। ছেলের ওপর থেকে আকর্ষণ চলে গেছে জন্যই সেই মেয়ে মাগী নয়, মেয়ের
ওপর থেকে আকর্ষণ চলে গেছে জন্যই সেই ছেলে প্রতারক নয়।
ফলে যেটা
হতো, একটা মেয়ে কাউকে ভালোবাসলে, বা কাউকে পছন্দ করলে তার সাথে একান্তে
মিলিত হতে দ্বিধাবোধ করতো না। সমাজে যদি এরকম ব্যবস্থা থাকে যে, প্রতিটি
নারী এবং পুরুষ নিজের নিজের পছন্দমতো সঙ্গী খুঁজে নেবে এবং তার সাথে
স্বেচ্ছায় নিরাপদে মিলিত হতে পারবে, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান একসাথে হয়ে
যেতো।
যার যৌনতা তৃপ্ত, সে ধর্ষণ করতে যেতো না। যার গার্লফ্রেন্ড
আছে, সে তাকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতো, পতিতালয়ে ছুটতো না। ধর্ষণ বন্ধ হতো,
পতিতাবৃত্তি বন্ধ হতো, শুধু যৌনতার আশা নিয়ে মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয়
করার প্রবণতা বন্ধ হতো, রাতে বাচ্চা মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া বন্ধ হতো,
মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ফালতু ভয় পাওয়ার বা নিজেকে অপবিত্র ভাবার প্রবণতা
বন্ধ হতো, ছেলে মেয়েদের স্বাভাবিক কথাবার্তা বলার সময় লজ্জা পাওয়ার প্রবণতা
বন্ধ হতো। অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো, যদি শুধু সাধারণ যৌনশিক্ষাটা
আমরা সবাইকে দিতে পারতাম।
নারী পুরুষের স্বাভাবিক মিথষ্ক্রিয়ার
মাধ্যমেই একটা সুস্থ সমাজ গড়ে ওঠে। যৌনশিক্ষা চালু করার প্রয়োজনীয়তাটা
সেজন্যই, নারী পুরুষ সম্পর্ক আরও খোলামেলা হওয়া দরকার সেজন্যই। এখনই সময়
সেই যৌনশিক্ষা চালু করার। তা নাহলে আজকে এগারো বছরের শিশু, সাত বছরের শিশু,
এরপর সতেরো মাসের শিশুতে এসে পৌঁছেছে ধর্ষণের ঘটনাগুলো - কালকে আয়নার
সামনে দাঁড়িয়ে দেখবেন আপনি নিজেই কোন ফাঁকে ধর্ষিত হয়ে গেছেন, টেরই পাননি।
ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু সাথে সাথে এটাও দেখতে
হবে, কোন অবস্থায়, কোন পরিস্থিতিতে সে ধর্ষক হয়েছে। সেই অবস্থা, সেই
পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে ফেসবুকে লেখালেখি আর ধর্ষকের মাতৃদেবী ও
বোনেদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার ইচ্ছাই শুধু সার হবে, কাজের কাজ
কিছুই হবে না।
আমরা কি একটা ইভেন্ট খুলতে পারি, "অনতিবিলম্বে
আমাদের পাঠ্যক্রমে যৌনশিক্ষার প্রচলন ঘটানো হোক" দাবি নিয়ে ? সরকারের
দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কিছু কি করা যায় ? এগিয়ে আসার মতো আছেন কি কেউ
যিনি এই লেখা পড়ছেন ?
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার ফ্রেন্ড "Tumpa" কে, যার মাধ্যমে লিখাটি পেয়েছি।
Well you're right but we also should consider our morality
ReplyDelete