আমার একটা ছেলে আছে। ছেলের বয়স বেশি নয়, ১বছর ৭/৮ মাস হবে। সে যাই হোক না কেন, ছেলে যেহেতু আছে; ছেলের ভাল মন্দ যেহেতু দেখতে হয়, এই বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকার কারন নেই যে আমি এখন একজন অভিভাবক। একইভাবে আমার মা বাবাও আমার অভিভাবক ছিলেন। প্রতিটি পরিবারেই অভিভাবক থাকেন। অভিভাবকবিহীন পরিবার এই বাংলায় বিরল।
সন্তান জন্ম গ্রহন করার পর আমরা অভিভাবকগণ যেমন খুশি হই তেমনি আমাদের অনেক দায়িত্বও বেড়ে যায়। নিজ নিজ সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলা প্রতিটি অভিভাবকেরই পবিত্র দায়িত্ব। আমরা সব অভিভাবকই স্বপ্ন দেখি আমাদের সন্তান হবে দিগ্বিজয়ি, বিদ্যা বুদ্ধিতে দুনিয়া জয় করবে সে। তবে পরিতাপের বিষয় হল, শেষ হাসি হাসার সৌভাগ্য আমাদের সবার হয় না বরং আমরা বেশিরভাগই একটা সময় এসে দুখের সাগরে পাল তুলতে বাধ্য হই। সন্তান নামক মালাটি আমাদের গলার কাঁটায় পরিনত হয়,দিগ্বিজয়ি হবার বদলে সে হয় বিধ্বংসী,আর আমরা নিজের কপাল নিজে চাপড়ে নিজের ভাগ্যকে দোষ দিতে থাকি। আসলে কি আমাদের মন্দভাগ্যই শুধু দায়ি? অন্য কয়েকজন সফল হলেও আমরা বেশিরভাগই কেন আমাদের সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে বিফল হই?
আসলে ভাগ্যকে দোষ দিয়ে আমরা কোনভাবেই আমাদের দায়িত্ব শেষ করতে পারব না। সবার আগে আমাদের ভেবে দেখতে হবে,যে ফল আমার সন্তান থেকে আমি পাবার স্বপ্ন দেখেছিলাম;সে অনুযায়ী কি আমি আমার সন্তান নামক চারাগাছের পরিচর্যা করতে পেরেছি? পরিচর্যা ব্যাপারটি একটু জটিল এবং কৌশল নির্ভর। এখানে আদরের যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন শাসনের। যে কোন একটির অভাব সম্পূর্ন প্রক্রিয়াটিকে সফলতাহীন করে দিতে পারে। এরপর প্রয়োজন সন্তানের বিদ্যাশিক্ষার দেখভাল করা। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই আমরা বিদ্যালয়ের উপর এবং শিক্ষকদের উপর সন্তানের বিদ্যাশিক্ষার দায়িত্ব অর্পন করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করি। বিদ্যালয় ও শিক্ষকগণ হয়তো নিজেদের দায়িত্ব পালন করলেন কিন্তু তারপর বাড়িতে যে পরিচর্যা সে পাবার কথা তাতো আমরা করলাম না। পরিচর্যা কি যথাযথ হল?
সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি হল শৃংখলাবদ্ধ জীবনাচরন। যেখানে আমরা অভিভাবকরা সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ হচ্ছি। সন্তানের প্রতি আমাদের মাত্রাতিরিক্ত আদর, নমনীয়তা এর প্রধান কারন। সন্তানের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না, বাড়িতে নিয়ম করে তাকে আমরা পড়ার টেবিলে বসাতে পারছি না। আজব ধরনের পশুর মত চুল নিয়ে সে আমাদের আশাপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে; আমরা মেনে নিচ্ছি। সন্ধ্যার পর ইচ্ছেমত আমাদের প্রিয় সন্তানটি বাড়ির বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে;আমরা তাকে কিছু বলার সাহস করছি না! যদিও ১৮বছরের আগে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা নিষেধ;আমরা তাদের দামি ফোন কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছি!সন্তানের সাথে একসাথে বসে অশ্লীল টিভি সিরিয়াল দেখছি। কেউ আমাদের সন্তানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করলে আমরা অন্ধভাবে আমাদের সন্তানকে সমর্থন করে যাচ্ছি। সন্তানের অপকর্ম ঢাকার জন্য সন্তানের সামনেই অন্যের কাছে মিথ্যে বলছি।
কি হচ্ছে এসব? কি করছি আমরা অভিভাবকরা?
এভাবে আমাদের সন্তানরা মানুষ হবে? এভাবে আমাদের সন্তানরা আমাদের স্বপ্ন সত্য করবে?? এভাবে আমাদের সন্তানরা দিগ্বিজয়ি হবে???
তবে কিছু অভিভাবক আছেন, যারা সম্পূর্ন বিপরীত। তারাই সফল। তারাই শেষ হাসি হাসেন।
No comments:
Post a Comment