Saturday, March 28, 2020

সামগ্রিক শিক্ষা দিবেন একজন শিক্ষক

যে কথাগুলো বলবো, সেগুলো সবারই জানা। তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভেবে আমি আবার বলছি। একজন শিক্ষককে হতে হবে আপাদমস্তক একজন শিক্ষক। শুধুমাত্র বিদ্যালয় সময়ে নয়, বরং তিনি হবেন চব্বিশ ঘন্টার শিক্ষক। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন যেমন তিনি শিক্ষার্থীদের যত্ন নিবেন, তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন; একইভাবে বিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থানকালীন সময়েও শিক্ষার্থীদের দেখভাল করার বা আলোকিত সমাজ গড়ার দায়িত্ব তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। শিক্ষকতা জীবনে 'ডিউটি টাইম' বলতে কিছু নেই। তাইতো শিক্ষকতা কোন চাকুরি নয় বরং একটি মহান পেশা। 
শ্রেণি কক্ষে শুধুমাত্র সিলেবাস শেষ করা বা এমএমসিতে আপলোড করার জন্য ছবি তোলা বা পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ থাকা একজন প্রকৃত শিক্ষকের কার্যক্রম হতে পারে না। আজ আমাদের সমাজ অবক্ষয়ের পথে। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক আজ অম্লতাপূর্ণ, সমাজ আজ একজন শিক্ষককে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করছে না। 'এসব কি হচ্ছে? কলি কি সত্যিই উল্টাইতে বসিল' এসব বলে একজন শিক্ষক দায় এড়াতে পারেন না। একটি সমাজ গঠনের মূল দায়িত্ব শিক্ষকগণের, তাহলে এই অবক্ষয়িত সমাজের দায় কি শিক্ষকদের উপর পড়ে না? আমরা কি শিক্ষক হিসেবে নিজেদের বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে পারছি? আমরা কি সততা অবলম্বন করছি? শিক্ষার্থীদের আমরা কি নৈতিক শিক্ষা দিচ্ছি? একটা ব্যাপার হলো, আমরা নিজেরাই যদি নীতিবান না হই, আমাদের নীতিকথা কি শিক্ষার্থীদের নিকট গ্রহনযোগ্য হবে? ভুলে গেলে চলবে না, শিক্ষার্থীরাই একজন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ বিচারক। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় মুখ ফুটে অনেক কিছুই প্রকাশ করে না; তবে প্রত্যেক শিক্ষকের আমলনামা প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসপটে স্পষ্টভাবে সারাজীবনের জন্য গেঁথে থাকে। তাই নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার আগে নিজেকে নীতিবান হওয়া আবশ্যক। এবং অবশ্যই শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। যে শিক্ষক নিজে নীতিবান হয়ে নৈতিকতা শিক্ষা দিবেন তিনি শিক্ষার্থীদের নিকট নমস্য হওয়ার পাশাপাশি আলোকিত সমাজ গঠনে প্রকৃতপক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন। তাছাড়া সমাজে তিনি হবেন স্মরণীয় ও বরণীয়। আমি বিশ্বাস করি শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের সমাজ থেকে সত্তরভাগ ব্যাভিচার দূর করা বা প্রতিরোধ করা সম্ভব।  শিক্ষার্থীদের 'এ প্লাস' প্রাপ্তির যোগ্য করে গড়ে তোলা কোনভাবেই একজন শিক্ষকের লক্ষ হতে পারে না, বরং এই একটিমাত্র অপধারণাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, এমনকি শিক্ষকদের মর্যাদাকে হুমকিতে ফেলার জন্য যথেষ্ট। একজন শিক্ষকের মূল দায়িত্ব হচ্ছে আলোকিত মানুষ তৈরির ভিত গড়ে দেওয়া।          
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে প্রযুক্তিজ্ঞানবিহীন একজন শিক্ষক মূর্খসম। পেশাগত উন্নয়ন করা না গেলে সুনামের সাথে এই মহান পেশায় টিকে থাকা দায় হওয়াটাই স্বাভাবিক। 
আজ আর নয়। সবাই ভালো থাকবেন, দোয়া রাখবেন। 
= প্রবাল ভৌমিক=
= ২১ অক্টোবর ২০১৯=
= মীরসরাই=

Post Comment

No comments:

Post a Comment