মা বাবার একমাত্র ছেলে মহিম। বাবা সালাম সাহেব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও মা জোহরা খাতুন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে অনেক আদরযত্নে লালিতপালিত হচ্ছিল মহিম। নাদুসনুদুস গড়নের মহিম পরিবারের সবার কাছেই ছিল খুব প্রিয়।
মা ও বড় আপুদের কাছে প্রাক প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় এলো মহিমের। সালাম সাহেব এলাকার সবচেয়ে নামকরা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন একমাত্র পুত্র সন্তানকে। প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ের গাড়ি এসে নিয়ে যেতো আবার দুপুরে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিত। বিদ্যালয়ে খুব মন গেঁথে গেল মহিমের; বন্ধুবান্ধবদের সাথে মজার সময় কাটছিল, লেখাপড়াও চলছিল সুন্দরভাবে। সালাম সাহেব তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন।
শিক্ষকদের স্নেহ-মমতায় প্রথম বছর এভাবেই হাসি আনন্দে কেটে গেল। ভালো ফলাফল করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলো মহিম। বিপত্তি বাঁধলো দ্বিতীয় বছরের শুরুতেই। শ্রেণি শিক্ষক মদন বাবু প্রথম দিন থেকেই মহিমের উপর বিনাকারণে বিরূপ হয়ে উঠলেন। এ যেন এক ভিন্ন গ্রহের শিক্ষক; যার সাথে অন্যকোন শিক্ষকের মিল খুঁজে পেলনা মহিম। প্রথম দিন থেকেই তিনি বিভিন্নভাবে মহিমকে আক্রমণ করতে থাকলেন; বিশেষকরে মহিমের নাদুসনুদুস গড়ন কোনভাবেই যেন মদন বাবু সহ্য করতে পারছিলেন না। প্রায় প্রতিদিন ক্লাসে এসে মদন বাবু প্রথমেই মহিমের গড়ন সংক্রান্ত কোন এক হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতির অবতারণা করতেন। ক্লাসের বেশিরভাগ অবুঝ শিশু মদন বাবুর হাস্যরসে যোন দিত আর মহিম মাথা নিচু করে তার দোষ খোঁজার ব্যার্থ চেষ্টা করতো। হাজিরা ডাকার পর প্রথম পড়া জিজ্ঞাসা করা হতো মহিমকে। একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে আরেকটা, এরপর আরেকটা, তারপর আরেকটা; এভাবে সে না আটকানো পর্যন্ত মদন বাবু মহিমকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতেন। যখনই সে আটকে যেত, তখনই শুরু হতো মদন বাবুর অট্টহাসি সহযোগে বেত্রাঘাত।
দিনের পর দিন পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকলো। আগে মহিমের কোন বন্ধু তার শারীরিক গড়ন নিয়ে কোন মন্তব্য করতো না কিন্তু মদন বাবুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইদানিং অনেকেই তার শারীরিক গড়ন নিয়ে হাসিঠাট্টা শুরু করলো। মহিমের শিশুমনে দাগ কাটা শুরু হলো। সে কিছু ভেবে উঠতে পারছিল না। তার বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকলো। একা হয়ে যাচ্ছিল মহিম। একপর্যায়ে মা বাবার কাছে সব কথা খুলে বললো মহিম। সালাম সাহেব ভদ্রলোক মানুষ; শিক্ষকের দোষ না খুঁজে তিনি ছেলের দোষ খুঁজছিলেন। একটি শিশুর সাথে একজন শিক্ষক এমন আচরণ করতে পারেন, তা সালাম সাহেবের কাছে কল্পনাতীত ছিল। মহিমের মুখের হাসি উড়ে গেলো, পড়ালেখায় মন নেই, খাওয়া-দাওয়া করছিল না ঠিকমতো। যতক্ষণ বাড়িতে থাকে সারাক্ষণ একা একা কি যেন ভাবে। জোহরা খাতুনের জোরাজোরিতে একদিন বিদ্যালয়ে গেলেন সালাম সাহেব। সরাসরি মহিমের শ্রেণিকক্ষের দরজায় গিয়ে দেখলেন শিক্ষক মদন বাবু তার আদরের পুত্রকে বেত্রাঘাত করছেন; তার মুখে অট্টহাসি, শ্রেণিকক্ষের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও হাসছিল আর মহিম নিঃশব্দে মাথা নিচু করে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল।
মনের কোন চিনচিন করে ব্যাথা অনুভব করলেন সালাম সাহেব। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে বিনাবাক্যব্যয়ে মহিমের টিসি সংগ্রহ করে দপ্তরিকে দিয়ে মহিমকে ডেকে এনে বিদ্যালয় ত্যাগ করলেন সালাম সাহেব।
পুনশ্চঃ
সালাম সাহেব পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন ১০/১২ বছর আগে। মহিম এখন লেখাপড়া শেষ করে উদীয়মান ব্যবসায়ী। আর মদন বাবু এখন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মহিমের কথা মদন বাবুর মনে আছে কিনা জানা যায়নি, তবে মহিম এখনো ঘৃণাভরে মদন বাবুকে স্মরণ করে।
মা ও বড় আপুদের কাছে প্রাক প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় এলো মহিমের। সালাম সাহেব এলাকার সবচেয়ে নামকরা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন একমাত্র পুত্র সন্তানকে। প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ের গাড়ি এসে নিয়ে যেতো আবার দুপুরে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিত। বিদ্যালয়ে খুব মন গেঁথে গেল মহিমের; বন্ধুবান্ধবদের সাথে মজার সময় কাটছিল, লেখাপড়াও চলছিল সুন্দরভাবে। সালাম সাহেব তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন।
শিক্ষকদের স্নেহ-মমতায় প্রথম বছর এভাবেই হাসি আনন্দে কেটে গেল। ভালো ফলাফল করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলো মহিম। বিপত্তি বাঁধলো দ্বিতীয় বছরের শুরুতেই। শ্রেণি শিক্ষক মদন বাবু প্রথম দিন থেকেই মহিমের উপর বিনাকারণে বিরূপ হয়ে উঠলেন। এ যেন এক ভিন্ন গ্রহের শিক্ষক; যার সাথে অন্যকোন শিক্ষকের মিল খুঁজে পেলনা মহিম। প্রথম দিন থেকেই তিনি বিভিন্নভাবে মহিমকে আক্রমণ করতে থাকলেন; বিশেষকরে মহিমের নাদুসনুদুস গড়ন কোনভাবেই যেন মদন বাবু সহ্য করতে পারছিলেন না। প্রায় প্রতিদিন ক্লাসে এসে মদন বাবু প্রথমেই মহিমের গড়ন সংক্রান্ত কোন এক হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতির অবতারণা করতেন। ক্লাসের বেশিরভাগ অবুঝ শিশু মদন বাবুর হাস্যরসে যোন দিত আর মহিম মাথা নিচু করে তার দোষ খোঁজার ব্যার্থ চেষ্টা করতো। হাজিরা ডাকার পর প্রথম পড়া জিজ্ঞাসা করা হতো মহিমকে। একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে আরেকটা, এরপর আরেকটা, তারপর আরেকটা; এভাবে সে না আটকানো পর্যন্ত মদন বাবু মহিমকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতেন। যখনই সে আটকে যেত, তখনই শুরু হতো মদন বাবুর অট্টহাসি সহযোগে বেত্রাঘাত।
দিনের পর দিন পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকলো। আগে মহিমের কোন বন্ধু তার শারীরিক গড়ন নিয়ে কোন মন্তব্য করতো না কিন্তু মদন বাবুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইদানিং অনেকেই তার শারীরিক গড়ন নিয়ে হাসিঠাট্টা শুরু করলো। মহিমের শিশুমনে দাগ কাটা শুরু হলো। সে কিছু ভেবে উঠতে পারছিল না। তার বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকলো। একা হয়ে যাচ্ছিল মহিম। একপর্যায়ে মা বাবার কাছে সব কথা খুলে বললো মহিম। সালাম সাহেব ভদ্রলোক মানুষ; শিক্ষকের দোষ না খুঁজে তিনি ছেলের দোষ খুঁজছিলেন। একটি শিশুর সাথে একজন শিক্ষক এমন আচরণ করতে পারেন, তা সালাম সাহেবের কাছে কল্পনাতীত ছিল। মহিমের মুখের হাসি উড়ে গেলো, পড়ালেখায় মন নেই, খাওয়া-দাওয়া করছিল না ঠিকমতো। যতক্ষণ বাড়িতে থাকে সারাক্ষণ একা একা কি যেন ভাবে। জোহরা খাতুনের জোরাজোরিতে একদিন বিদ্যালয়ে গেলেন সালাম সাহেব। সরাসরি মহিমের শ্রেণিকক্ষের দরজায় গিয়ে দেখলেন শিক্ষক মদন বাবু তার আদরের পুত্রকে বেত্রাঘাত করছেন; তার মুখে অট্টহাসি, শ্রেণিকক্ষের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও হাসছিল আর মহিম নিঃশব্দে মাথা নিচু করে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল।
মনের কোন চিনচিন করে ব্যাথা অনুভব করলেন সালাম সাহেব। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে বিনাবাক্যব্যয়ে মহিমের টিসি সংগ্রহ করে দপ্তরিকে দিয়ে মহিমকে ডেকে এনে বিদ্যালয় ত্যাগ করলেন সালাম সাহেব।
পুনশ্চঃ
সালাম সাহেব পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন ১০/১২ বছর আগে। মহিম এখন লেখাপড়া শেষ করে উদীয়মান ব্যবসায়ী। আর মদন বাবু এখন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মহিমের কথা মদন বাবুর মনে আছে কিনা জানা যায়নি, তবে মহিম এখনো ঘৃণাভরে মদন বাবুকে স্মরণ করে।
No comments:
Post a Comment