গ্রামীণ ব্যাংক, ড.ইউনূস ও কিছু কথা
গ্রামীণ ব্যাংক অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো। পার্থক্য শুধু দেশ বিদেশে তার সুনাম। এবং শান্তির জন্যে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস যৌথভাবে নোবেল পাওয়া। গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসের এই যৌথভাবে নোবেল পাওয়া দেশের জন্যে গর্বের। জাতির জন্যেও গৌরবের। এবং শুধু আমার মতো ক্ষুদ্র সাংবাদিক নয়, দেশ-বিদেশের অনেক গুণীজন এটাও স্বীকার করেন, মানুষের জন্যে দেশে ও বিদেশে কাজ করার অবদানস্বরূপ ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদেরও নোবেল পাওয়া উচিত। এবং হয়ত শীঘ্র তিনি সেটা পাবেন। এবং ফজলে হাসান আবেদের নোবেল পাওয়াটা হবে অনেকটা অর্মত্য সেনের নোবেল পাওয়ার মতো। কারণ, অনেক আগেই তাঁর পাওয়া উচিত ছিল কিন্তু নিজের থেকে কোন লবিং না করায় অনেক পরে কেবল কাজের যোগ্যতায় তিনি পেয়েছেন বা নোবেল কমিটি দিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও প্রবল প্রচারের জোরে এই সত্য বাংলাদেশসহ বিদেশের মানুষ ভুলে গেছেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশে মাইক্রো ক্রেডিট প্রথম চালু করেন ফজলে হাসান আবেদ। তবে তিনি একটি বিষয়ের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকেননি। তাছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের পুনর্গঠনে সাহায্য করার জন্যে নানান দিকে তাঁর কাজ ছড়িয়ে দেন। ফজলে হাসান আবেদের কাজের বিস্তারিত নিয়ে লিখতে গেলে এ লেখা লক্ষ্য বিচ্যুত হবে। তবে তারপরেও বলতে হয়, শিক্ষা বিস্তারে ও বাংলাদেশ থেকে ডায়রিয়া ও কলেরা নির্মূলে ফজলে হাসান আবেদের ব্র্যাকের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমনকি বর্তমান সরকারের আমলে বর্গা চাষী ও প্রান্তিক চাষীদের যে ঋণ দেয়া হয়েছে তার ব্যবস্থাপনায় অনন্য সাফল্য রেখেছে ব্র্যাক। যাহোক তারপরেও দেশে-বিদেশে প্রচারের জোরে আজ গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসকে মাইক্রোক্রেডিটের জনক বলা হয়। তবে এটা না বলে মাইক্রোক্রেডিটের সফল নায়ক বললে সত্য বলা হবে।
গ্রামীণ ব্যাংক মাইক্রোক্রেডিট সফলভাবে বিতরণ করলেও এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি একটি ব্যাংক ও তাকে দেশের ব্যাংক রেগুলেটরি অথরিটির সর্বোচ্চ কাঠামো অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংককে মানতে হয়। মানতে হয় ব্যাংক পরিচালনার নিয়ম ও কাঠামো। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠান বা নাগরিককে বাড়তি সুযোগ দেবার কোন এখতিয়ার আছে কিনা এটা আইনবিদগণ ভাল বলতে পারবেন। তবে সাদা চোখে যা দেখা যায় তাতে সেটা সম্ভব নয়। আর এটা ড. ইউনূসও ভাল জানেন। যে কারণে তিনিই জানতেন তাঁর ওই ব্যাংকে আর এমডি পদে থাকার কোন সুযোগ নেই আইনত। এ জন্যে যতদূর জানি এই সরকার আসার পর পরই তিনি বর্তমান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এমনকি যতদূর জানি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় গেলে সেখানে হিলারি ক্লিন্টনের মাধ্যমে অনুরোধ করিয়েছিলেন যেন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে একটি সাক্ষাত দেন। প্রধানমন্ত্রী কেন তাঁকে সেটা দেননি ওই বিষয়ে সঠিক তথ্য আমার জানা নেই। তবে যতদূর শুনেছি তাতে এখানে দুটো বিষয় কাজ করে। এক, ২১ আগস্ট যখন জামায়াত-বিএনপি সরকার শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনা ভাগ্যগুণে বেঁচে যান ওই সময়ে দেশের সকল সুধীজন তার সঙ্গে দেখা করেন ও টেলিফোনে খোঁজ নেন। এমনকি পরবর্তীতে মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক হলেও সেদিন আতাউস সামাদও তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এমনকি যতদূর জানি ফজলে হাসান আবেদসহ অনেক বড় এনজিও ব্যক্তিত্বও তাঁর সঙ্গে দেখা করে সহানুভূতি জানান। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না হলেও জাতির জনকের কন্যা হিসেবে এটুকু সহানুভূতি শেখ হাসিনা দেশের সুধীজনের কাজ থেকে পেতেই পারেন। কারণ, যে দেশের স্রষ্টাকে সপরিবারে স্বাধীনতারবিরোধী চক্র হত্যা করেছে। ভাগ্যগুণে বেঁচে থাকা দুটি মেয়ের একজনকে যখন আবার স্বাধীনতাবিরোধী চক্র গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করে তখন তাঁকে সহানুভূতি জানানো সাধারণ ভদ্রতা ও মানবিকতার বিষয়। কিন্তু ওইদিন একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ড. ইউনূস। তিনি শেখ হাসিনাকে একটি টেলিফোনও করেননি। তারপরে ১/১১ এ সেনাসমর্থিত সরকারের সহায়তায় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্যে তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দুটি কারণে শেখ হাসিনা তাঁকে কোন সাক্ষাত নাও দিতে পারেন। তবে শেখ হাসিনা একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী, ড. ইউনূসের এই কাজ যদি সত্য হয় তারপরেও শেখ হাসিনা হয়ত নিজ উদারতা দিয়ে ওই সঙ্কীর্ণতাকে তুচ্ছ মনে করতে পারতেন। যাহোক, হয়ত এটাও হতে পারে প্রধানমন্ত্রী তো জানছেন যে, ড. ইউনূসের যে সমস্যা সে বিষয় নিয়ে তিনি বার বার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করছেন। এবং অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ড. ইউনূসের শুভাকাক্সক্ষী। কারণ, গ্রামীণ ব্যাংক তাঁর হাত দিয়েই শুরু।
যাহোক, ব্যাংকের এমডি থাকার বয়স না থাকায় ড. ইউনূস অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে যতদূর শুনেছি অর্থমন্ত্রী তাঁকে এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যেন ড. ইউনূস জড়িয়ে থাকেন। এবং সে ক্ষেত্রে তিনি আজীবন সম্মানিত উপদেষ্টা হতে পারেন। যার ফলে তিনি আরো অনেক নতুন লোক তৈরি করতে পারবেন। এবং তাতে তার অবর্তমানে ব্যাংকটি সহজে চলবে। অর্থাৎ এটা আর ব্যক্তিনির্ভর থাকবে না, প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। কারণ, গ্রামীণ ব্যাংকে সব থেকে বড় যে ঘাটতিটি বর্তমান তা হলো দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যক্তির অভাব। এবং এটা সৃষ্টি হবার কথা ছিল না। কিন্তু যারা গ্রামীণ ব্যাংককে আজকের এই অবস্থানে আনতে সাহায্য করেছেন তাদেরকে কেন যেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অনেকটা সম্মান হারিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। যেমন দীপাল বড়ুয়া, ইকবাল কাদির প্রমুখ। প্রথম দিকে ড. ইউনূসও রাজি ছিলেন অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে। আর সব কাজ সেভাবে এগুচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বেঁকে বসলেন ড. ইউনূস। তিনি অর্থমন্ত্রীকে জানালেন যে, না তাঁকে এমডিই রাখতে হবে। যার জন্যে সরকারের হাতে কোন আইন ছিল না। তাই দেশের প্রচলিত আইনে ওই ব্যাংকটি চালাতে গেলে ড. ইউনূসকে এমডি রাখা সম্ভব ছিল না। এ জন্যে অর্থমন্ত্রী বেশ বিপাকেই পড়েন। তিনি বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে ইউনূসের সঙ্গে আলাপ করেন বলে শুনেছি। কিন্তু যতদিন যেতে থাকে ততই ড. ইউনূস তার অবস্থানে শক্ত হতে থাকেন যে তিনি এমডি থাকবেন।
তারপরে যা হয় সেটা দেশবাসী ভালমতো জানেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী ড. ইউনূসকে জানানো হয় কেন তিনি এমডি পদে আছেন সেটা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করার জন্যে। ড. ইউনূস তখন ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকজন সেরা আইনজীবীর মাধ্যমে দেশের উচ্চ আদালতে যান। উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয় যে, এমডি থাকার নির্দিষ্ট বয়সসীমা পার হবার কারণে ড. ইউনূস আর এমডি থাকতে পারেন না। অর্থাৎ ড. ইউনূসের এমডি থাকা ও না থাকার বিষয়টি শেষ অবধি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে ফয়সালা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের জন্যে দুর্ভাগ্যজনক হলো, সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিসিটি উইং কেউ পারেনি এই সত্যটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বা বিদেশী সুধীজনের কাছে তুলে ধরতে। বরং দেশ বিদেশের সুধীজন ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এটাই প্রচারিত হয়েছে যে, সরকার ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এ ধরনের অপপ্রচারে সরকারের যা ক্ষতি হয় সেটার থেকে দেশের বিচার ব্যবস্থার ক্ষতি হয় বেশি। তাই দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি, বিশেষ করে সংবিধানের প্রতি যাদের শ্রদ্ধা আছে তাঁরা সাধারণত এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকেন। যাঁদের নেই তাঁরা এ কাজটি যে করে সেটা আমরা গত সাড়ে চার বছর দেখছি। দেশের আইনে সকল রকম স্বচ্ছতা শুধু নয়, অনেক ক্ষেত্রে আসামি পক্ষকে বেশি সুযোগ দিয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। অথচ দেশের সংবিধান অমান্যকারী দল জামায়াতে ইসলামী দেশ-বিদেশে প্রচার চালাচ্ছে যে, এটা একটা নামমাত্র ট্রাইব্যুনাল। এখানে কোন স্বচ্ছতা নেই। এই বিচারে স্বচ্ছতা নেই। সে বিচারে দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রীমকোর্টে আপীলের সুযোগ আছে সেখানে কোন স্বচ্ছতা নেই এটা কিভাবে বলে? দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে এভাবে অবমাননা করার অর্থ দেশ ও দেশের সংবিধানকে অস্বীকার করা। ড. ইউনূসের বিষয়টি নিয়ে যে অপপ্রচার হয়েছে সেটা এই পর্যায়ে পড়ে কিনা সেটা আইনবিদগণ ভাল বলতে পারবেন। তবে এটা সত্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে বিকৃতভাবে সারা পৃথিবীতে প্রচার করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এমডি পদ চলে যাবার পরে যে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে সব থেকে বেশি মোকাবিলা করতে হয় বলে শুনেছি সেটা হলো, ড. ইউনূসের নিজের নামে গ্রামীণ ব্যাংকের বাইরে যে ৫৪টি কোম্পানি আছে সেগুলোর আর্থিক কোন তদন্ত যেন না হয়। ড. ইউনূসের পক্ষ হয়ে পশ্চিমা অনেক কূটনীতিক বা আরো অনেক বড় পদের নানান ব্যক্তি এই অনুরোধ সরকারকে করেছে। তারা যেন, ড. ইউনূসের ওই কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিষয়ে কোন তদন্ত না করে। এ ক্ষেত্রে যতটা শুনেছি তাতে সরকারের জন্যে বিষয়টি একটি দ্বিমুখী করাতের মতো হয়। কারণ, দেশ-বিদেশে বলা হচ্ছে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকসহ ড. ইউনূসের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের কাঠামোর ভিতর দিয়ে দেখছে। আবার যদি তারা এর আর্থিক স্বচ্ছতা তদন্ত করে না দেখে তাহলে তার দায়ও শেষ অবধি সরকারের ঘাড়ে গিয়ে পড়তে পারে।
সরকার এই তদন্তে নামলে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি সরকারের ওপর যেমন চাপ সৃষ্টি করে তেমনি অনেক আন্তর্জাতিক মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করতে শুরু করে। কেন করে সেটা রহস্যজনক। নিউইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশের আর্থিক উন্নতি সম্পর্কিত অমর্ত্য সেনের লেখাও ছাপতে অস্বীকৃতি জানান। কেন এগুলো ঘটেছে সেটা ভবিষ্যতে একদিন ঠিকই প্রকাশিত হবে। তবে পশ্চিমা বিশ্বে যে অনেক বড় লবিং হয়েছে এ বিষয়ে সেটা নিশ্চিত। যেমন বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে সরে গেছে। অথচ এরও ভিতর কিছু রহস্য কিছু ইতিহাস আছে। যেমন এনসি লাভালিন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন আমরা লাভালিনকে ব্লাকলিস্ট করে দিচ্ছি। তোমরা কাজ চালিয়ে যাও। বাকি ষড়যন্ত্রের আমরা তদন্ত করব। প্রয়োজনে তোমরাও তদন্তে সহায়তা করো। কিন্তু বিশ্বব্যাংক যখন এই ঋণ বাতিল করে এবং আমাদের অর্থমন্ত্রী তৎকালীন বিশ্ব ব্যাংক প্রধান জোয়েলিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পেরে নিউইয়র্ক হয়ে ফিরে আসছিলেন, ওই সময়ে আন্তর্জাতিক রেটিং কোম্পানি মোডি তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কি মনে কর এই ঋণ বাতিলের পিছনে ড. ইউনূসের কোন লবিং রয়েছে।’ আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার তেমন কিছু জানা নেই। কিন্তু যে কোন অনুসন্ধানী সাংবাদিক মোডির মতো একটি রেটিং কোম্পানির এ ধরনের প্রশ্নকে অহেতুক বলে উড়িয়ে দেবেন না। তিনি আজ কিছু খুঁজে না পেলেও অপেক্ষা করবেন সত্য খুঁজে পাবার জন্যে। যাহোক এটা অনেক বড় বিষয়। এ ধরনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার সুযোগ ও সাপোর্ট বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নেই। তবে, একজন সাংবাদিক হিসেবে একটি প্রশ্ন বার বার ঘুরে ফিরে আসতে শুরু করে, সরকার যেখানে গ্রামীণ ব্যাংককে আইনের কাঠামোয় আনতে গিয়ে সুপ্রীমকোর্টের মাধ্যমে ড. ইউনূসের এমডি পদ চলে যাবার পরে এতটা বেকায়দায় সেখানে আবার ৫৪ কোম্পানিতে তদন্ত কেন? বিএনপির একজন দায়িত্বশীল ও শিক্ষিত নেতা মওদুদ আহমদ পার্লামেন্টে বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় এলে গ্রামীণ ব্যাংক যেমন ছিল তেমনি থাকবে। আমার মনে হয়, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে এবং মওদুদ আহমদকে আইনমন্ত্রীর বদলে অর্থমন্ত্রী করা হয় তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থেই এই ৫৪ কোম্পানির তদন্ত করবেন। তার একটা কারণের ইঙ্গিত কিন্তু অর্থমন্ত্রী পার্লামেন্টে দিয়েছেন। তিনি গ্রামীণফোনে গ্রামীণ ব্যাংকের যে শেয়ার আছে ওই শেয়ারের লভ্যাংশের কথা উল্লেখ করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের যে শেয়ার গ্রামীণফোনে আছে তার প্রতিবছরের লভ্যাংশের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের ৫৩ লাখ দরিদ্র নারী সাধারণের ভিতর ভাগ করে দিতে হবে আইনত। এই ডিভিডেন্ট তারাই পাবেন। যেহেতু তারা ওই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার। এই টাকা গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে প্রতি বছর ওই দরিদ্র মহিলারা পেলে আজ তাদের ধনী হবার কথা। তারা কিন্তু ওই টাকা পাননি।
যতদূর জানা যায়, এই টাকা দিয়ে ড. ইউনূস তার নিজের নামে সামাজিক ব্যবসা করছেন। ওই সামাজিক ব্যবসার উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক, অর্থনৈতিক সততার ও আইনের দৃষ্টিতে ওই টাকার মালিক তো ড. ইউনূস নন। গ্রামীণ ব্যাংকের ওই দরিদ্র মহিলারা। তাদের বাস্তবে প্রতারিত করা হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় না সরকার শেষ অবধি এই তদন্ত করতে পারবে। কারণ. ড. ইউনূস ব্যবসায়ী হিসেবে অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ। আমাদের দেশের অন্য ব্যবসায়ীরা এ সব ক্ষেত্রে যা করেন তিনিও সেই কাজ করছেন। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে নিয়েছেন। বেগম জিয়া অনেক আগেই তাঁকে আশ্রয় দেবার প্রস্তাব দিলেও তিনি তখন বাতাস বোঝার চেষ্টা করছিলেন। এখন চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরে তাঁর মনে হয়েছে বাতাস বেগম জিয়ার দিকে অনুকূল। এটা কারও না কারও মনে হতে পারে। রাজনীতির যদিও শেষ কথা এখানে নয়। যাহোক সেটা অন্য প্রসঙ্গ। চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরে তিনি তার ভাষা ও অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এখন বিএনপি নেতারা, দিগন্ত টিভিখ্যাত নব্য রূপে আর্ভিভূত কাদের সিদ্দিকী, কর্নেল অলিসহ আরও অনেকে তাঁর সঙ্গে দেখা করছেন। শুনেছি চট্টগ্রামে তিনি যে ইউনূস সুহৃদ সমাবেশ করলেন সেখানে যে তরুণরা ছিল তার বড় একটি অংশ ছাত্র শিবিরের। যাহোক মাথা গেলে লেজ যাবেই, বিএনপি গেলে জামায়াত যাবেই। আর ড. ইউনূসও এখন আর কোন রাখঢাক করছেন না। তিনি বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রশ্নে তাঁর অবস্থানের স্বপক্ষে যেই আসবে তাঁকেই তিনি স্বাগত জানাবেন। তাই শিবির বা জামায়াত নেতাও সুস্বাগতম। তবে এটা সত্য, দেশের ডান ধারার রাজনীতিতে ড. ইউনূসের অবস্থান দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এবং তিনিও রাজনীতিকদের মতো কথা বলছেন। যেমন সরকারের তরফ থেকে পার্লামেন্টে বলা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংককে কয়েক ভাগে ভাগ করার যে প্রস্তাব কমিশন প্রাথমিকভাবে করেছে তার সঙ্গে সরকার একমত নয়। এটা করা হবে না। কিন্তু তারপরেও ড. ইউনূস বলে যাচ্ছেন, সরকার এটা করতে যাচ্ছে। বাস্তবে যে কোন দেশে ডান ধারার রাজনীতি করতে গেলে এ ভাষাতেই কথা বলতে হয়।
No comments:
Post a Comment