Monday, January 30, 2017

"মিরসরাই ফুট ওভারব্রিজ" - একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং একজন অসুস্থ বৃদ্ধার কষ্ট

----------------------- প্রবাল ভৌমিক
নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়কের অন্যান্য অনেক স্থানের মত মিরসরাইয়ে নির্মিত হয়েছে একটি ফুট ওভারব্রিজ। কোন সন্দেহ নেই, এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। যদিও ওভারব্রিজটি আরো বেশ কিছু দিন আগে নির্মিত হয়েছে, তবে গত ২/১ দিন এটি আবার মিরসরাইবাসির আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে এসেছে। কারন এতদিন এই ফুট ওভারব্রিজটি তেমন কেউ ব্যবহার করত না বললেই চলে। প্রায় সবাই রোড ডিভাইডার এর মাঝে যে দুটি স্থানে ফাঁকা ছিল তা ব্যবহার করত রাস্তা পারাপারের জন্য। এতে অনেকের মনেই এই ওভারব্রিজ নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে সম্প্রতি রোড ডিভাইডার এর মাঝে যে দুটি স্থানে ফাঁকা ছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই বলা যায় এখন মিরসরাইবাসি রাস্তা পারাপারের জন্য উক্ত ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে অনেকটাই বাধ্য। আসলে বাধ্য না করলেও দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের উচিত নিরাপদ রাস্তা পারাপারে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা। 

মিরসরাইতে আমার দেখা এটি ২য় ফুট ওভারব্রিজ। এর আগেও ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই এ একটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবহার বান্ধব না হওয়ায় নির্মাণের কিছু দিন পরই উক্ত ওভারব্রিজ এর নিশানা আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাই বর্তমান ওভারব্রিজটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী; তাছাড়া ব্যবহার বান্ধব করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উক্ত ওভারব্রিজটি থাকতে হবে ছিনতাইকারী, মাদকসেবী এবং নোংরা- আবর্জনা মুক্ত; সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে মহিলা, শিশু সহ সকল রাস্তা পারাপারকারী উক্ত ওভারব্রিজটি ব্যবহার করতে নিরাপদ বা স্বস্তি বোধ করেন; ওভারব্রিজ এ উঠা নামার দুই প্রান্তের পথ খোলা এবং হকারমুক্ত থাকতে হবে ইত্যাদি। 

এবার বলছি একজন ৬০ বছর বয়সী অসুস্থ বৃদ্ধার কথা। গরীব ঘরের সদস্য। ডাক্তার দেখানো সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এদিক ওদিক যাতায়াত করতে হয়। যখন ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়ক এর প্রস্থ আরো কম ছিল তখন অনেকটা সহজে রাস্তা পার হতে পারতেন। কিন্তু রাস্তার প্রস্থ বাড়ার পর থেকে রাস্তা পারাপারের জন্যে পরিবারের কোন সদস্যের বা কোন পথচারীর সহযোগিতা নিতেন। কিন্তু সেদিন ছোট নাতিকে নিয়ে রাস্তায় উঠেতো ওই বৃদ্ধার চক্ষু চড়কগাছ। রাস্তা পার হবার জায়গা কই! পরে লোকজন থেকে জানতে পারলেন, এখন রাস্তা পার হতে হবে শুধুমাত্র ওভারব্রিজ এর উপর দিয়েই। ওই উঁচু ফুট ওভারব্রিজ এর দিকে তাকিয়ে সেই অসুস্থ বৃদ্ধার মাথা ঘুরে উঠল, উপরে উঠার দুঃসাহস আর করলেন না। পরে ছোট নাতিকে নিয়ে বেশ কিছু দূর দক্ষিন দিকে হেঁটে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে রাস্তা পার হলেন আর বিড় বিড় করে গলদ ঘর্ম বদনে বিরক্তির ছাপ নিয়ে কি যেন বলছিলেন।  

শুধুমাত্র নিরাপদ রাস্তা পারাপারের কথা চিন্তা করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবার নয়। এই সব বৃদ্ধ মা বাবার কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। তাঁদের কি সাধ্য আছে এই ফুট ওভারব্রিজ পাড়ি দেওয়ার? তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কি করা হয়েছে? তাঁরা কি ঘর বন্দি হয়ে যাবেন? তাঁরা কি শুধুই গলদ ঘর্ম বদনে বিরক্তির ছাপ নিয়ে বিড় বিড় করবেন? না, আশা করছি নিকট ভবিষ্যৎ এ তাঁদের কথা বিবেচনা করে প্রতিটি ওভারব্রিজ এর কাছাকাছি জেব্রা ক্রসিং বা আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। সেই দুঃখহীন দিনের প্রতীক্ষায়। 

---------------------------------------------------

লেখাটি ৩১/০১/২০১৭ তারিখে mirsaraitribune এ প্রকাশিত হয়। 

Post Comment

1 comment:

  1. বৃদ্ধ মা বাবার কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে কারন তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কি ?

    ReplyDelete