Monday, August 5, 2013

প্রথম প্রেমের স্মৃতি

 
সপ্না আমার জীবনে এসেছিল স্বপ্নের মত।

সপ্নার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল আমাদের এইচ এস সি পরীক্ষার সময়। ও আমাদের পাশের মহিলা কলেজে পড়ত। তাদের কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল না, আমাদের কলেজে ওই মহিলা কলেজের মেয়েদের পরীক্ষা দিতে হত। ঠিক কোন দিন তাকে প্রথম দেখি তা মনে করতে পারছি না। তবে পরীক্ষার মধ্যেই দেখেছিলাম। পরীক্ষা নিয়েই তখন বেস্ত ছিলাম। সপ্নাদের কলেজের অন্য মেয়েদের মতই তখন সপ্নাকে দেখেছিলাম। কোন কথাবার্তা হয় নি। নামও জানা হয় নি তখন। শুধু চেহারাটা দেখেছিলাম। বিশেষ কোন অনুভূতিও ছিল না। আসলে তখন ওসব নিয়ে তেমন ভাবতেও হয়তো শিখিনি।

রেজাল্ট হবার পর ভর্তি হলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্তর্ভুক্ত একটি কলেজে। বাড়ি থেকে অনেক দূরের পথ, তাই একটি মেসে উঠলাম। মেসে আমার রুমমেট ছিলেন আমাদের পাশের গ্রামের সঞ্জয় দা। দাদা বেশ আন্তরিক ও সদালাপী ছিলেন। দু'দিনেই দাদার সাথে আমার বেশ জমে গিয়েছিল। ক্লাস শেষ করে এসে ৩য় দিন দুপুর বেলায় রুম এর দরজা বন্ধ করে একা শুয়ে ছিলাম, সঞ্জয় দা তখনও কলেজে। দরজায় টোকা পড়তে, দরজা খুলে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। দেখলাম, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণী, বেশ চেনা চেনা লাগছিল। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, আমাকে দেখে তরুণীটিও কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। প্রায় ১ মিনিটের নীরবতা ভেঙ্গে সে বলল, তুমি পল্লব না? সাথে সাথে বিদ্যুৎ গতিতে আমার স্মৃতি ভাণ্ডার আমাকে মেয়েটির কথা মনে করিয়ে দিল। আমি উত্তর দিলাম, হুম। তুমিতো আমাদের কলেজে পরীক্ষা দিয়েছিলে, তাই না? উত্তর এলো, হ্যাঁ; আমি সপ্না। ওইদিন প্রথম ওর নাম শুনেছিলাম। তারপর জানতে চাইলাম, তুমি এখানে? 

সপ্না জানাল, সেও আমাদের কলেজে ভর্তি হয়েছে, প্রাণীবিদ্যা বিভাগে, আর সঞ্জয় দা তার আত্মীয় হয়; তাই দেখা করতে এসেছে। আমাদের পাশের বাসায় উঠেছে। আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সপ্না আমার রুমে বসল এবং সঞ্জয় দা না আসা পর্যন্ত বেশ গল্প হল।    

এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কলেজে দেখা হত সপ্নার সাথে, হাই হ্যালো হত। আর দু'একদিন পর পরই সপ্না আসতো সঞ্জয় দার সাথে দেখা করতে। যেহেতু দুপুরের পর আসত তাই আমার সাথেও দেখা হত। কথা হত। এভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল। কিছুদিন পর আমি আবিস্কার করলাম, এখন সপ্না প্রতিদিনই আসা শুরু করেছে। অবাক হয়ে আরও আবিস্কার করলাম, আমিও যেন ইদানিং তার জন্য অপেক্ষা করা শুরু করেছি। সে আসার সময় হলে মন কেমন যেন চঞ্চল হয়ে উঠত। আর কোনদিন আসতে দেরি হলে বা না আসলে নিজের অজান্তেই আমার মন সপ্নার উপর অভিমান করত। সে এসে গল্প করা শুরু করলে কেমন যেন একটা আনন্দ মাখা চাপা উত্তেজনা অনুভব করতাম। 

রাতে ঘুমে সপ্না স্বপ্ন হয়ে আসা শুরু করল। আসলে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখনও আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে আসলে কি ঘটছে। সপ্নার বেবহারিত পারফিউম এর ঘ্রান আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। সপ্না আমাদের রুমের কাছাকাছি আসলেই আমি তার পারফিউম এর ঘ্রান অনুভব করতাম। মনটা আনন্দে লাফিয়ে উঠত। আমি যেন মাতাল হয়ে যেতাম। 

একদিন কলেজে সপ্নাকে দেখে বললাম, আজ ১২ টার দিকে একটু আমার রুম এ আসতে পারবে? সপ্না সরাসরি উত্তর দিয়েছিল, পারব। রুম এ এসে সপ্নাকে বললাম, আমি সবাই কে মিষ্টি খাওয়াতে চাচ্ছি। সপ্না নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল। আবার বললাম, কি? খাওয়াব? সপ্না মাটির দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় আমাকে উত্তর দিয়েছিল, আমি তোমাকে কাল জানাব। আমি ঠিক আছে বলার সাথে সাথে ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি অধির আগ্রহে কাল এর জন্য অপেক্ষা করলাম। 

পরদিন কলেজে দেখা হল। সেই আমাকে বলল, চল তোমার রুম এ যাব। রুম এ আসার পর দু'জন অনেকক্ষন নিশ্চুপ বসে ছিলাম। আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। একবার সপ্নার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর একবার জানালা দিয়ে বাইরের দিকে। আর সপ্না তাকিয়ে ছিল মাটির দিকে। প্রায় ১০ মিনিটের নীরবতা ভেঙ্গে ছোট্ট করে সপ্না বলল, ঠিক আছে। কথাটা শুনে আমার যেন মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেল। হা করে প্রায় ২ মিনিট সপ্নার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এই ছোট্ট কথাটা বুঝতে যেন আমার পুরা ২ মিনিট সময় লেগে গেল। এরপর খুশিতে একটা লাফ দিয়েছিলাম। এখনো পুরা মনে আছে, এই খুশিতে সপ্নার কপালে একটা চুমো দিতে চেয়েছিলাম। বিনিময়ে যে মাপের ঝাড়ি উপহার পেয়েছিলাম, কি আর বলব ভালবাসার প্রথম উপহার।

ইতিমধ্যে পদ্মা, মেঘনায় অনেক পানি বয়ে গেছে। আজ অনেক সাল পর সপ্নার কথা লিখছি। আমি ভালই আছি। জানিনা, আজ সপ্না কোথায় আছে, কেমন আছে। 

আচ্ছা, সপ্না কি এখনো আমাকে আগের মত ভালবাসে ? 

--------------------------------------------------------------------------------------

নিচের লিখাগুলোও আপনি পছন্দ করতে পারেন -

আমার ভাবনা

ভিন গ্রহি " ক্রিস গেইল " (কল্প কাহিনী)

অমানুষ

=চরিত্র - হনন=

একটি সম্পূর্ণ প্রেমের গল্প


Post Comment

No comments:

Post a Comment