Thursday, July 31, 2014

আমার প্রথম "কনে" দেখা

অনেককেই অবাক করে দিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম যে, মা বাবার ইচ্ছেতেই বিয়ে করব। শুরু হল "কনে" খোঁজার পালা। বাবা বিভিন্ন দিকে খোঁজ খবর নিতে শুরু করলেন। 

অভিজ্ঞ মাত্রই জানেন, এতো মেয়ের ভিড়ে জুতসই একটা "মেয়ে" খুঁজে পাওয়া কত কষ্টকর। যাই হোক, সেই কষ্টকর কাজটাই আমার বাবা আনন্দ সহকারে করার উদ্যোগ নিলেন। আমি যদিও বিষয়টির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম না, তারপরও মাঝে মাঝে মা-বাবার কথা আড়ি পেতে শুনে আঁচ করতে পারছিলাম যে, আসলেই একটা জুতসই "কনে" খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কষ্টের কাজ। এদিক মিলে তো ওইদিক মিলে না, আমাদের পছন্দ হয় তো ওদের পছন্দ হয় না, ইত্যাদি ইত্যাদি। 

দীর্ঘ প্রায় ০৬ মাস এই সব কাহিনী চলতে চলতে বাবা আমার জন্য একটা পছন্দসই "মেয়ে" র খোঁজ পেয়ে গেলেন। "মেয়ে" শিক্ষক, এক ভাই-এক বোন, "মেয়ে" র বাবা সরকারী চাকুরী করেন। বলা যায়, একেবারে খাপের খাপ। "মেয়ে" র বাবার সাথে আমার বাবার ফোন এ কথা হল। ঠিক হল, প্রথম ছেলে-"মেয়ে" একে অপর কে দেখবে। যদি উভয়ের পছন্দ হয়, তাহলে কথাবার্তা এগুবে। 

দুই/একদিনের মধ্যে একদিন সকালে অফিস যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় বাবা এসে আমার সামনে বসলেন। শান্তভাবে বিস্তারিত বললেন এবং জানালেন, পরদিন "মেয়ে" র স্কুল এ যেতে হবে, দেখাদেখি ওখানেই হবে। আরও জানালেন, আমার সাথে আমার এক ছোট ভাই যাবে। আর ওই স্কুল এর প্রধান শিক্ষক "মেয়ে" র আত্মীয় হন; উনি সব কিছুর ব্যবস্থা করবেন। স্কুল এ পৌঁছে প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে পরিচয় দিলেই হবে। 

যে কথা সে কাজ। পরদিন ছোটভাইকে নিয়ে আমার প্রিয় বাইক CRUX  এ চড়ে পৌঁছে গেলাম লক্ষিত সেই স্কুল এ। প্রধান শিক্ষক মহোদয় হাসি মুখে বরন করে উনার কক্ষে নিয়ে আমাদের বসালেন। জানালেন, "মেয়ে" এখনো আসে নি। বলে রাখা ভাল, বরাবরই মেয়েদের সামনে আমার একটু জড়তা কাজ করে, সামনা সামনি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে আমি বেশ বিব্রত বোধ করি। যাহোক, টেনশিত অবস্থায় অপেক্ষা করতে থাকলাম। মনে মনে এটা ভেবে পুলকিত হচ্ছিলাম যে, "মেয়ে" নিশ্চয় অনেক সেজে গুজে আসছে, হবু বরের সামনে আসবে- সেজে আসবে না ? তাই দেরি হচ্ছে। কি কি কথা বলা যেতে পারে, তা মনে মনে ভেবে ভেবে মুখস্থ করছিলাম। 
"বাবু চা নিন"। প্রধান শিক্ষক মহোদয় নিরবতা ভাঙ্গলেন। দেখলাম, সামনে চা বিস্কুট চলে এসেছে। চা তে বিস্কুট চুবিয়ে খেতে খেতে প্রধান শিক্ষক মহোদয় আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে থাকলেন। এখনো মনে আছে, আমি কেন এনজিও তে চাকুরী করি(?), সরকারী চাকুরীর জন্য আমার বয়স আছে কিনা(?) এই বিষয় দুটিই  খুব বেশি আলোচনা হয়েছিল। 

প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পার হবার পর ছাতা বটতে বটতে একটি মেয়ে আমাদের অবস্থানরত কক্ষে প্রবেশ করলেন। আড় চোখে একটু করে তাকালাম। খারাপ নাহ ! উনি একপাশে গিয়ে বসলেন। তাঁকে খুব ব্যস্ত দেখাচ্ছিল। তিনি খুব স্বাভাবিকভাবে প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের সাথে কুশল বিনিময় করছিলেন। আমাদের দিকে তেমন একটা খেয়াল করছিলেন না। খটকা লাগল। এটাই কি "মেয়ে", নাকি অন্য কেউ। কারন, আমার জানা মতে একজন বঙ্গ ললনা কখনই তার হবু বর এর সামনে এতোটা স্বাভাবিক থাকতে পারে না। প্রধান শিক্ষক মহোদয় "মেয়ে"-র সাথে কথা বলা শুরু করলেন। "মেয়ে" কত সালে এসএসসি পাশ করেছে, ভাই বোন কত জন, কত সাল থেকে শিক্ষকতা শুরু করেছে, লিখাপড়া কতটুকু করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি "মেয়ে"-র কাছে জানতে চাচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক মহোদয়। "মেয়ে" অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে  বিরক্ত বোধ করছিলেন এবং বার বার বলছিলেন, স্যার- আপনি আমায় এসব কি জিজ্ঞাসা করছেন? এসব আপনি জানেন না? প্রধান শিক্ষক মহোদয় তাঁর বিজ্ঞতার প্রমান দিয়ে প্রতি উত্তরে বললেন, তোমার কাছে যা জানতে চাচ্ছি- তা বল। বিরস বদনে "মেয়ে" প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিলেন। আমি মাথা নিচু করে সব শুনছিলাম। বুঝতে পারলাম, আমার আগমনের বিষয়টি সম্ভবত "মেয়ে" কে অবগত করা হয় নি। মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমার পালার জন্য। কারন আমি নিশ্চিত ছিলাম, "মেয়ে" কে প্রশ্ন করা শেষ হলে নিশ্চয়ই প্রধান শিক্ষক মহোদয় আমাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবেন। আমি মনে মনে প্রশ্নের উত্তর ভালভাবে প্রস্তুত করছিলাম। কারন আমি জানতাম, তিনি আমাকে কি প্রশ্ন করবেন। "আমি কেন এনজিও তে চাকুরী করি(?), সরকারী চাকুরীর জন্য আমার বয়স আছে কিনা(?), মনে মনে ভালভাবে প্রস্তুতি গ্রহন করলাম। 

আমার সব প্রস্তুতি জলে গেল। "মেয়ে" কে প্রশ্ন করা শেষ করে, আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি হেসে, প্রধান শিক্ষক মহোদয় মেয়েকে ক্লাস টু এর অংক ক্লাস এ পাঠিয়ে দিলেন। খুব আশাহত হলাম। প্রথম কনে দেখতে এসে "কনে" র সাথে একটা কথাও বলতে পারলাম না? চেহারার দিকে তাকাতে পারলাম মাত্র একবার? তাও আড় চোখে? নিজেকে খুব খালি খালি লাগছিল। প্রধান শিক্ষক মহোদয় হাসি মুখে শুধালেন, "আর একটু চা এর জন্য বলব?" বুঝতে পারলাম, তিনি আর আমাদের জন্য সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত না। হাসি মুখে প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম। 

দু/চার দিন পর খবর পেলাম আমার বাবা আমার জন্য অন্য "মেয়ে" দেখতে শুরু করেছেন, কারন ওই "মেয়ে" র আমাকে পছন্দ হয় নি। আরও পরে বাই দ্যা বাই জানতে পারলাম, আমার চাকুরী এবং আমার উচ্চতা মেয়ের পছন্দ হয় নি। তাই আমাকে পছন্দ হয় নি। 


========================================

উপরের লিখাটি স্রেফ একটি "গল্প"। কেউ যদি বাস্তবতার সাথে এই গল্পের কোন মিল খুঁজেন, তাহলে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে খুঁজবেন। কারন এর জন্য আমি কোন দায় নিতে প্রস্তুত নই।

Post Comment

No comments:

Post a Comment