Wednesday, July 26, 2017

বাঙালী বীরের জাতি

বাঙালী বীরের জাতি। বাঙালী সাহসী জাতি। রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার আদায় করেছিল এই জাতি। ১৯৭১ সালে মাত্র ০৯ মাস যুদ্ধ করে একটি সুসজ্জিত এবং সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর ৯৩,০০০ সৈন্যকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল এই বাঙালী জাতি।
৪৬ বছর অতিবাহিত হতে চলল। আজ আমরা কোথায়? আমরা কি সোনার বাংলা গড়তে পেরেছি? এককথায় বলতে গেলে আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। আসলে কোন বীর, সাহসী, দৃঢ়চেতা জাতির উন্নয়নের এই ধীর উন্নয়ন চিত্র কাম্য নয়। যে জাতি ০৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, সে জাতির উন্নতি করতে কেন ৫০/৬০ বছর লেগে যাবে?
প্রশ্নটির উত্তর প্রায় সকল বাঙালীর জানা আছে। সবাই জানেন আলস্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এই তিনটিই আমাদের জাতীয় উন্নয়নের পথে মূল বাধা। আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে, আমরা আমাদের উন্নয়নের পথে বাধাগুলো কি তাও জানি কিন্তু ওই বাধা আমাদের পক্ষে কাটিয়ে উঠা সম্ভবপর হচ্ছে না। এ যেন, রোগ ধরা পড়েছে কিন্তু ঔষধ দেবার কেউ নেই। এক কথায় খুব অসহায় অবস্থায় আছি আমরা।
প্রথমত আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে মূল্যায়ন করতে পারিনি। স্বাধীনতা অর্জনের স্বাদ গ্রহণ করতে না করতেই আমরা আদর্শ বিচ্যুত হয়েছি। যে বাংলাকে আমরা দাম দিয়ে কিনেছিলাম সে বাংলা মাকেই আমরা বারবার আঘাত করতে শুরু করলাম। পরিনাম নিশ্চয় ভাল হবার কথা নয়, তেমনই হল।
১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি আজ সফল। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে একটি অথর্ব জাতিতে পরিণত করতে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তারা আমাদের মাঝে অনুপ্রবেশ করে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদির চাষ করা শুরু করে এবং আমাদেরও এইসব মাদকে আসক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যায়। বলতে দ্বিধা নেই, অনেকাংশে তারা সফল হয়েছে। যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, যে জাতি স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, সে জাতি অলসতা করে, দুর্নীতি করে স্বজনপ্রীতি করে নিজের মা তুল্য দেশের ক্ষতি করবে, তা কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। ওই ৭১ এর পরাজিত শক্তিই সুকৌশলে আমাদের আদর্শ বিচ্যুত করেছে, আমাদেরকে দিয়েই আমাদের দেশের উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
আমাদের চারপাশে এখনো বহাল তবিয়তে বিচরণ করছে বেশ কিছু সেই সব ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা এবং তাদের অনুসারীরা। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা বেশ সজাগ, বেশ কৌশলী, অতি যত্নে নিজেদের প্রকৃত রূপ ঢেকে রেখেছে। নিজেদের দেশ দরদী, প্রগতিশীল, অতিজ্ঞানী জাহির করতে এরা সদা সক্রিয়। তবে একটু চেষ্টা করে ঘনিষ্ঠ হলেই এদের চেনা যায়। এরা কখনোই নীতিবান নয়, এরা সব সময় অন্যায় করে এবং অন্যকে দিয়ে অন্যায় করায়, খারাপ কাজ করতে মানুষকে উৎসাহিত করে, ভাল কাজ কে অবমূল্যায়ন করে, খারাপ কাজের মূল্যায়ন করে, যোগ্য লোককে প্রাধান্য না দিয়ে অযোগ্যদের কাছে টানে, মিথ্যা বলে, মিথ্যা বলায়, কাজে ফাঁকি দেয় এবং ফাঁকিবাজ কে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করে, কাজ কম করে, কথা বেশি বলে এবং সব সময় নিজেকে জাহির করার অপচেষ্টা করে। এধরনের কোন লোক পেলে নিশ্চিত জেনে নিবেন, এই লোক কোনভাবেই বাংলা মায়ের সন্তান নয়, তার জন্মে নিশ্চিত সমস্যা আছে।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করা কোন জাতি কোনভাবেই আলস্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি করে নিজের দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে না। এই আলস্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ধীরে ধীরে অতি সংগোপনে আমাদের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, আমাদের পথভ্রষ্ট করা হয়েছে। এভাবে কি চলতে দেয়া যায়? এখনইকি আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো উচিত নয়?? এখনইকি সেইসব পরাজিত শক্তিদের সকল চক্রান্ত রুখে দিয়ে প্রিয় বাংলাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত সময় নয়???

Post Comment

No comments:

Post a Comment