Wednesday, July 26, 2017

প্রিয় কুমিল্লা

আমার অসম্ভব ভাল লাগার স্থানগুলোর মধ্যে একটা হল কুমিল্লা। জীবনের ৫-৬ টা বছর কাটিয়েছিলাম কুমিল্লাতে। অন্যভাবে বলতে গেলে, জীবনের সোনালী সময়গুলো কাটিয়েছি কুমিল্লাতে।
২০০০ সালে মীরসরাই কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করার পর ২০০১ সালে ভর্তি হই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। এখনো মনে আছে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ০১ তারিখ ক্লাস শুরু হয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কি প্রথম প্রথম ক্লাস রুম এ স্যার দের লেকচার তেমন একটা বুঝতাম না বললেই চলে। প্রায় সব স্যারই ইংরেজিতে লেকচার দিতেন। এক্ষেত্রে আমাদের মত মফস্বল এর ছেলেদের যা হয় আরকি। যাই হোক আস্তে আস্তে সবই বুঝতে লাগলাম, বলতে পারলাম, ভাল লাগতে লাগল।
থাকতাম বারেক মেম্বার মেস এ। ওই মেস এর বেশির ভাগ সদস্যই ছিলেন আমাদের মীরসরাই এর। অল্পতেই সবার সাথে খুব ভাব হয়ে গিয়েছিল। মেস মেট হিসেবে পেয়েছিলাম দেবু দা, উজ্জ্বল দা, সত্যজিত দা, ইউসুফ ভাই, সঞ্জয় দা, চিত্ত দা, রুপম, দিলু, ঝুলন, নাইমুল, নিশান, সাইফুল, রফিক ভাই, সাইফুল ভাই, সজল দা, রতন দা, শংকর দা, শংকর কাকু, দেবু কাকু এবং নাম ভুলে যাওয়া অনেককে। অন্য আরেকদিন বারেক মেম্বার মেস এবং এর সদস্যদের নিয়ে কিছু লেখব।
প্রথম প্রথম কলেজে যেতাম, ক্লাস করতাম এবং ফিরে আসতাম। তেমন বন্ধু বান্ধব ছিল না। তবে বেশি সময় লাগল না। আমার সদাহাস্য মুখ এবং বন্ধুভাবাপন্ন মন সহজেই অন্যদের আকর্ষন করতে লাগল এবং প্রতিদিনই বন্ধু তালিকায় নতুন নতুন নাম যোগ হতে লাগল। সময়ের সাথে সাথে অনেক, অ-নে-ক, অ------- নে-------- ক ------------ বন্ধু। কয়েকশত, হয়তোবা কয়েক হাজার। কয়েকজন বন্ধুর নাম বলছি, তবে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারন সময়ের সাথে সাথে অনেকের নামই ভুলে গেছি। তাই অনেকের নামই হয়তো বাদ পড়বে। আরিফ, হামিদ, সঞ্জয়, মামুন, নাছের, হোসেন, জুয়েল, ফেরদৌস, মামুন, ভুলু, কামরুল, পলাশ, জামশেদ, উজ্জ্বল, হাক্কানী, জসিম, রোকন, মাসুম, সুমন, জন, শাহ আলম, ইমতিয়াজ, স্বাধীন, রক, কাদের, মিঠু, শামীম, রবি ভাই, দুলাল, হিরু, শরীফ, আকাশ, রিয়াদ, দোলন, উত্তম, সাজ্জাদ, সাকি, বিপ্লব, ইব্রাহিম, আল আমিন, মানিক, বিশ্বজিত, আর মনে করতে পারছি না।
কি করিনি কুমিল্লা জীবনে? সব সবই করেছি। তারুন্যকে উপভোগ করেছি। বাঁধা গরু ছাড়া পেলে যা হয় আরকি! গান করেছি, আড্ডা মেরেছি, ঘুরেছি, রাত জেগেছি, আরো কতকি।
সকাল ৯টায় কলা ভবনের সামনে আড্ডা, দুপুর ১২টার পর ক্যম্পাসের জামতলার আড্ডা, বন্ধু হোসেনের বাড়ির কাচারি ঘরে কাটানো সেইসব দুপুর, বিকেলে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাদদেশ বা ধর্ম সাগর পাড়ের আড্ডা, ক্লাসের গ্যাপ পেলেই ৩০২ নাম্বার রুম এ বন্ধুদের সাথে বসে গান করা এসবই এখনো স্মৃতি হয়ে আমার মানস পটে জেগে আছে।
মাঝে মাঝে সিনেমা হলে গিয়ে রাত ৯ টা থেকে ১২ টার শো, এরপর রাত ১২ টায় রিক্সা না পেয়ে বন্ধু বান্ধব মিলে শার্ট খুলে বাতাসে নাড়তে নাড়তে এবং গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে পায়ে হেঁটে মেস এ ফিরে আসা। দীপিকা, দীপালী, মধুমতি, রূপালী এবং রূপকথায় সিনেমা দেখতাম তবে লিবার্টি ততদিনে বন্ধ হয়ে গেছে। আর কুমিল্লা রেল স্টেশন এ অনেক সন্ধ্যা কাটিয়েছি স্বপ্নিল ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে। মনে পড়ছে রেল স্টেশনে দুটি রেস্টুরেন্ট ছিল, একটি 'আল আমিন হোটেল' অন্যটি 'হোটেল আল আমিন'। রমজান মাস ছাড়া বাকি ১১ মাস এই দুটি রেস্টুরেন্ট ২৪ ঘন্টা একনাগাড়ে খোলা থাকত। অনেক দিন, সন্ধ্যা এমনকি গভীর রাতে খেয়েছি এই দুটি রেস্টুরেন্ট এ। তাছাড়া শাসনগাছার 'মেলোডি' ও 'ভাই ভাই হোটেল' এ-ও অনেক সন্ধ্যা কেটেছে। এসব কি সারা জীবন ভুলা যাবে?
প্রিয় কুমিল্লা, তোমায় ভালবেসেছি, তোমায় ভালবেসে যাব।

Post Comment

No comments:

Post a Comment