ইদানীং আবেগ'টা বেশ পেয়ে বসেছে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে। অবস্থাটা এমন যে, তরুণ মানেই আবেগী। আবেগ মানবীয় চরিত্রেরই একটা অংশ, তবে অতি আবেগ কখনোই যথার্থ মানবীয় নয়।
প্রথমে দেখা যাক আবেগকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। উইকিপিডিয়া'র মতে, "আবেগ-কে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। আবেগকে অনেকে অনুভূতির সমার্থক ধরে নেয়। যদিও অনুভূতি শারিরীক/মানসিক দুইই হতে পারে, আবেগ মূলতঃ মানসিক। এটা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উদ্ভূত হয়; সচেতন উদ্যম থেকে নয়। এর সাথে মাঝে মাঝে শারিরীক পরিবর্তনও প্রকাশ পায়। সেক্ষেত্রে আবেগকে বলা যায় অনুভূতির উৎস। আবার শারীরিক ভাবে বলতে গেলে মসৃণ পেশী এবং বিভিন্ন গ্রন্থির কারনে শরীরের অন্তর্নিহিত পরিবর্তনই হল আবেগ ৷ সামগ্রিকভাবে, চেতনার যে অংশ অনুভূতি বা সংবেদনশীলতার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তাকে আবেগ বলা যায়।
আবেগ(Emotion) শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Emovere থেকে। Morgan & King এর মতে আবেগ এর ৫ টি উপাদান থাকা দরকার। সেই উপাদান গুলো হচ্ছেঃ ১। আবেগের মানসিক বা আত্মনিষ্ঠ অনুভূতি। ২। শারীরিক উত্তেজনা। ৩। শরীর বৃত্তীয় ভিত্তি। ৪। মৌখিক, ভাষাগত এবং অঙ্গ সঞ্চালনমূলক বহিঃপ্রকাশ। ৫। সংশ্লিষ্ট প্রেশনামূলক অবস্থা।"
সুতরাং আবেগ একটি বিশেষ শারীরিক ও মানসিক অবস্থা। এটি মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা নয়। তাই যদিও আবেগ এড়ানো সম্ভয় নয়, তবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।
অতি আবেগী মানুষ জীবনে সফলকাম হয়েছে এমন উদাহরণ বিরল। তারা সব কিছুই বেশি বেশি করে। বেশি রাগ করে, বেশি অভিমান করে, বেশি প্রত্যাশা করে, বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়, যে কথা রাখতে পারবে না তেমন কথা দিয়ে ফেলে, যে কাজ করতে পারবে না তেমন কাজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেলে; এক কথায় এক ঘোরের মধ্যে কাটতে থাকে তার জীবন। আর স্বাভাবিকভাবেই এই অতি চাওয়াগুলো কখনোই তার পাওয়াতে পরিণত হয় না। নিজের অজান্তেই সে একের পর এক আবেগী তথা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। একসময় হতাশা তাকে আচ্ছন্ন করে, কালো আঁধারে ভরে যায় তার জীবন।
Morgan & King এর মতানুযায়ী ৪ নং উপাদানটির খুব তীব্রভাব দেখা যায় আজকালকার অতি আবেগী তরুণদের মধ্যে। তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ ইদানীং এমনকি অশ্লীলতা, পাকামি ও আদবহীনতার রুপ নিয়েছে। আবেগকে প্রকাশ করতে গিয়ে এক শ্রেণির তরুণ প্রতিনিয়ত অশ্লীল কথাবার্তায় তার নিজের অথবা অন্যের টাইমলাইন নোংরা করছে। অতি আবেগীদের ধারণা, তারা এই বয়সেই পাণ্ডিত্যের সনদ অর্জন করে ফেলেছে এবং কোন বয়োজ্যেষ্ঠ বা অন্য কোন মানব সন্তান কোনভাবেই তাদের চেয়ে বেশি জানার কোন সুযোগ নেই। অতএব, বিনয় তাদের চরিত্রে অনুপস্থিত এবং আবেগের বহিঃপ্রকাশে প্রায়শঃ তারা প্রতিবাদের নামে বেয়াদবির চর্চা করে যাচ্ছে।
এই অতি আবেগ থেকে মুক্তির উপায় কি? অতি আবেগ নামক এই সর্বনাশা ব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল বিবেককে জাগ্রত করা। বিবেক দিয়েই আবেগকে জয় করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পরিবার সন্তানদের বিবেক জাগ্রতকরণে ভূমিকা রাখুক, অতি আবেগ নির্মুল হোক, সুস্থ-সুন্দর-নির্মল আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি তরুন তথা প্রতিটি মানুষের জীবন।
- প্রবাল ভৌমিক, এপ্রিল ২৭, ২০১৮
No comments:
Post a Comment