চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার ৪নং ধুম ইউনিয়নের অস্তিত্বহীন ঐতিহ্য মহাজনহাট জমিদার বাড়ি। ১৯০৫ কিংবা ১৯০৬ সালে মৃত্যুবরণ করার পূর্ব পর্যন্ত রায়বাহাদুর গোলক চন্দ্র চৌধুরী এই বাড়িতে থাকতেন এবং এই এলাকার জমিদার ছিলেন বলে জানা যায়। জমিদারি প্রথা রহিত হওয়ার পর রায় বাহাদুর গোলক চন্দ্রের উত্তরসূরীরা এই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই জমিদার বাড়ির দুটি ঘরের অস্তিত্ব থাকার কথা জানা গেলেও বর্তমানে সরেজমিনে পরিদর্শন করে মহাজনহাট জমিদার বাড়ির কোন চিহ্নই পাওয়া যায় নি; উক্ত জমিদার বাড়ির স্থানে গড়ে উঠেছে কিছু বসতি ও একটি পোল্ট্রি কমপ্লেক্স ।
ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রায় বাহাদুর খেতাব পাওয়া জমিদার গোলক চন্দ্র চৌধুরীর জীবন নিয়ে শোনা যায় নানা নাটকীয় ঘটনা। প্রাপ্ত তথ্য মতে জমিদার গোলক চন্দ্র চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেছিলেন বর্তমান ফেনী জেলার একটি দরিদ্র পরিবারে। তাঁর মা তৎকালীন সুর বংশীয় জমিদার বাড়িতে কাজ করতেন। গরু নিয়ে মাঠে গিয়ে একদিন গুপ্তধনের সন্ধান পান বাবু গোলক চন্দ্রের পিতা। বদলে যায় তাঁদের জীবন কাহিনী। ১৮৪৫ সালে ফেনী ছেড়ে মীরসরাই এর ধুম এলাকায় এসে জমিজমা কিনে বসবাস করতে শুরু করে গোলক চন্দ্রের পরিবার।
চট্টগ্রামের অন্যতম বিদ্যাপীঠ 'চট্টগ্রাম কলেজ' প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে জমিদার গোলক চন্দ্র চৌধুরী নগদ দশ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে ১৮৭১ সালে উক্ত কলেজটি পুনরায় চালু করার ভূমিকা রাখায় বৃটিশ সরকার কর্তৃক তাঁকে রায় বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়।
জানা যায়, মীরসরাই এর ধুম এলাকায় বসতি স্থাপনের পর মহাজনী ব্যবসা করে অল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের অর্থ-সম্পত্তি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন গোলক চন্দ্র চৌধুরীর পরিবার। গোলকেরহাট ও মহাজনহাট বাজার স্থাপনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের কালিবাড়ি ও মাঝিরঘাট এলাকায় প্রচুর জমি কিনেন রায় বাহাদুর গোলক চন্দ্র। তাছাড়া রামগড়ে ছিল তাঁদের চা বাগান। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এলাকায় নির্মাণ করেছিলেন ডাকঘর, দাতব্য চিকিৎসালয় ও বিদ্যালয়।
অন্যদিকে চড়া সুদে মহাজনী ব্যবসা করা, প্রজা বান্ধব হয়ে না উঠা, নিজের প্রতিষ্ঠিত বাজার হতে অতিরিক্ত কর আদায় করা, মামলা দিয়ে জনসাধারণকে হয়রানি করাসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ শোনা যায় জমিদার রায় বাহাদুর গোলক চন্দ্রের বিরুদ্ধে।
প্রায় দেড়শো বছর আগে নির্মিত মহাজনহাট জমিদার বাড়িটি একটি পুরাকীর্তি, হাজারো ঘটনার স্বাক্ষী এবং হতে পারতো আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কিন্তু বাংলাদেশের এমন আরো অনেক পুরাকীর্তির মতো এটিও আজ বিলুপ্ত। এভাবেই অযত্নে অবহেলায় হয়তো ভবিষ্যতেও হারিয়ে যাবে বাংলার অনেক পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
প্রবাল ভৌমিক, মীরসরাই, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ইং
No comments:
Post a Comment