Sunday, March 29, 2020

অসুস্থ ভাবনা

আজ হঠাৎ করে দেখা করিম সাহেবের সাথে। পেশাগত দিক থেকে আমরা সমগোত্রীয়।
একগাল হাসি হেসে বললেন-
ভাই, আপনারে মনে মনে অনেকদিন ধইরা খুঁজতাছি।
আমি বললাম-
যাক, দেখা হইয়া গেল। বলেন, কিয়ের লাগি খুঁজতাছেন?
করিম সাহেব উৎসাহ নিয়ে বললেন-
ভাই, নতুন একডা প্রোজেক্ট হাতে নিছি। কাজ প্রায় শেষ কইরা ফালাইছি। পুজিঁ  অল্প, লাভ বেশি। এহন আপনারা যদি একটু হাতটা বাড়াইয়া দেন, তাহইলে বেশ ভাল একটা দান মারতাম পারি। আপনারগো লাগিও কিছু থাকব৷ মিল্লামিশ্যা কিছু আয় উপার্জন করণ আরকি।
আমি চোখ বড়বড় করে উনার কথা গিলছিলাম। কথা শেষ হলে বললাম-
রিজাইন কবে দিলেন? একটু জানালেনওনা ভাই? তো, ব্যবসা শুরু কইরা দিছেন। বেশ ভাল করছেন। কি ব্যবসা শুরু করলেন? আমি কি করতাম পারি? আমারে কেমনে মিশাইবেন আপনার ওই দলে?
করিম সাহেব আমার কথা শুনে একটু থতমত খেলেন। বললেন-
ভাই, এইসব কি কইতেছেন? রিজাইন দিছি মানে? রিজাইন দিমু ক্যান? ভাই, মাস্টরির লগেও এহন ব্যবসা করণ যায়; রিজাইন দেওন লাগে না।
এবারতো আমার চোখ চড়কগাছ। কি বলে! কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম-
ভাইঙ্গা কনতো ভাই। আসল কাহিনী কিতা?
করিম সাহেব যোগ করলেন-
পিইএসসি পরীক্ষাতো শেষ হইলো। পোলাপাইন হাই স্কুলে ভর্তি অইবো। অনেক স্কুল ভর্তি পরীক্ষা নিবো, আবার অনেকে ভর্তি করণের পর রোল নাম্বার নির্ধারণের লাগি মেধাযাচাই পরীক্ষা নিব। আর এইডা হইলো আমরার ব্যবসার জায়গা।
কিছুটা অবাক হলাম। আসলে তখনো ব্যাপারটা ধরতে পারছিলাম না।
করিম সাহেব আমাকে বুঝতে সাহায্য করলেন-
ধরেন, সিক্সের ভর্তি পরীক্ষা বা মেধা যাচাই পরীক্ষাডা হয় ক্লাস ফাইভের বইয়ের থাকি। পোলাপাইন পিইএসসি পরীক্ষা দিয়া আবার পুরা বই পড়তো চায় নি? চায় না। এরলাগি একটা সাজেশন বাহির কইরা ফালাইছি, প্রতি বিষয়ের ২০ টা কইরা শর্ট প্রশ্ন রাখছি। এহন স্কুলে স্কুলে যাইয়া যাইয়া কন্ট্রাক্ট করত অইবো। আমরা স্কুলরে কিছু সম্মানী দিয়া দিমু। শর্ত থাকব ভর্তি বা মেধা যাচাই পরীক্ষার প্রশ্নগুলো করবো আমরার সাজেশন থেইকা। আর আমরা ১০০% কমনের নিশ্চয়তা দিয়া সাজেশন বেচা শুরু কইরাম। লাভে লাভ  ভাই। একডা সাজেশনের পিছনে খরচ আছে ০৫ টাকা, বেচতে পাইরাম ৫০ টাকা। এহন ভাই আপনের স্কুলে কবে যাইয়াম অফার নিয়া? আপনে কইলাম হেল্প করন লাগবো।
শূন্যের দিকে তাকিয়ে ওই তথাকথিত মানুষ গড়ার কারিগরের লাভজনক প্রোজেক্টের বিবরণ শুনছিলাম আর আমার দৃষ্টি বরাবর শূন্য থেকে মাটির দিকে নেমে যাচ্ছিল। কথা শেষ করে তিনি যখন উত্তরের আশায় আমার মুখের দিকে তাকালেন; আমি মাটির দিকে দৃষ্টি রেখেই বললাম-
ভাই, এসব কি ঠিক করতাছেন? আর কত নিচে নামাইবেন পেশাডারে? আর কত পোলাপাইনের মাথা নষ্ট করবেন?
আরো কিছু বলার ইচ্ছে ছিল। কেন যেন আর কিছু বলতে পারলাম না। নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। মনে মনে ভাবছিলাম-
এরা কেমনে মাস্টর হয়? এরা তো ব্যবসায়ী, ব্যবসা না কইরা এরা স্কুল কলেজে কিতা করে?

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ 

Post Comment

No comments:

Post a Comment