তখন ৮ম বা ৯ম শ্রেণিতে পড়তাম। আমাদের এক বন্ধু/ সহপাঠী ছিল শ্যাম বর্ণের অধিকারী। (সঙ্গত কারণে নাম উল্লেখ করছি না) তার এই শ্যাম বর্ণের কারণে তার মনে দুঃখের অন্ত ছিল না।তার বদ্ধমূল ধারণা ছিল শুধুমাত্র এই শ্যাম বর্ণের কারণে সে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত ও অবহেলিত। টিনেজারদের ভাবনা যেমন হয় আর কি!
তখন বিটিভি ছাড়া আর কোন চ্যানেল দেখার ভাগ্য বাংলাদেশের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের হতো না। প্রতিটি বাড়ি বা বাসার উপর বাঁশে বাঁধা টিভি এন্টেনা ওই বাড়িতে বসবাসকারী রুচিশীল, ভদ্র মধ্যবিত্তদের অস্তিত্ব প্রকাশ করতো। যাইহোক, সে বিটিভিতে ওই সময় প্রকাশিত 'ফেয়ার এন্ড লাভলী'র একটা বিজ্ঞাপন আমার বন্ধু'র দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো হতো একটা শ্যাম বর্ণের মেয়ে 'ফেয়ার এন্ড লাভলী' ব্যাবহার করছে এবং প্রতিদিন সে ফর্সা হচ্ছে এবং চৌদ্দ দিন ব্যবহারের পর সে মেয়ে শ্যাম বর্ণ হতে ফর্সা বর্ণ ধারণ করলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে এমন বলা হতো, মাত্র চৌদ্দ দিন ব্যবহারে আপনি হবেন ফর্সা ও সুন্দরী।
বিজ্ঞাপনটি ভালো ভাবে দেখে আমার বন্ধু যেন হালে পানি পেলো! ভাবলো, এবার কিছু একটা হবেই। তাকে আর আটকায় কে? পরদিনই দোকানে গিয়ে 'ফেয়ার এন্ড লাভলী'র দুটা মিনি প্যাক কিনে নিয়ে আসলো। মা বাবা, ভাইবোন সবার চোখ এড়িয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে 'ফেয়ার এন্ড লাভলী' মুখে মাখছিল আর দিনে চল্লিশ বার করে আয়নায় মুখ দেখছিল। মাঝেমধ্যে তার কাছে মনে হচ্ছিল, কই কিছুইতো হচ্ছে না; আবার মাঝেমধ্যে আয়নায় নিজেকে একটু একটু ফর্সা দেখাচ্ছিল, পুলকিত হয়ে উঠছিল আমার বন্ধু। একদিন, দু'দিন করে চৌদ্দ দিনের কোর্স শেষ হলো। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার কোন ফল এলো না, বন্ধু'র শ্যাম বর্ণ শ্যামলাই রয়ে গেল; সাদা হলো না।
দুঃখে, রাগে, ক্ষোভে বন্ধু এক টুকরো কাগজ হাতে তুলে নিল, রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে আবেগঘন একটি পত্র লিখল প্যাকেট এর গায়ে থাকা 'ফেয়ার এন্ড লাভলী'র ঠিকানায়। পত্র প্রেরণ করে বন্ধু উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো কারণ তখনকার দিনে একমাত্র বাংলাদেশ ডাক বিভাগই ভরসা; কোন কুরিয়ার সার্ভিস ছিল না। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে ফিরতি ডাক এলো। অধিক আগ্রহ নিয়ে বন্ধু খাম খুললো। ভিতরে সুন্দর করে ভাজ করা একটা কাগজ ছিল। কাগজ খোলা হলো, কাগজের ঠিক মাঝখানে গোট গোট করে মেয়েলী হাতের একটা লাইন লেখা ছিল, "দুঃখিত, আবার চেষ্টা করুণ।" ঠিক ওই মুহূর্তে বন্ধুর চেহারা কেমন হয়েছিল, তা দেখার স্বাদ আজীবনই আমার থাকবে। কারণ পুরো ঘটনার কোন অংশেরই আমি প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী নই বরং চূড়ান্ত ঘটনার দেন সাতেক পরে হতাশাগ্রস্ত বন্ধুর মুখনিঃসৃত বক্তব্য হতে পুরো ব্যাপারটা আমি জানতে পারি।
এবার আসল কথায় আসি। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন কোম্পানি তথাকথিত ফর্সা করার ক্রিমের বিজ্ঞাপন প্রচার করে আমাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। কালো কি অসুন্দর? কেন তারা তাদের ক্রিম ব্যবহার করে ফর্সা হতে উৎসাহিত করবে?? এটা কি একধরণের বর্নবাদ নয়??? তাছাড়া কোন ক্রিম ব্যবহার করে কি কোন মানব সন্তান স্থায়ীভাবে আল্লাহ প্রদত্ত গায়ের রঙ পরিবর্তন করতে পারবে???? এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয় না কেন?????
১৬ মে ২০১৯
তখন বিটিভি ছাড়া আর কোন চ্যানেল দেখার ভাগ্য বাংলাদেশের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের হতো না। প্রতিটি বাড়ি বা বাসার উপর বাঁশে বাঁধা টিভি এন্টেনা ওই বাড়িতে বসবাসকারী রুচিশীল, ভদ্র মধ্যবিত্তদের অস্তিত্ব প্রকাশ করতো। যাইহোক, সে বিটিভিতে ওই সময় প্রকাশিত 'ফেয়ার এন্ড লাভলী'র একটা বিজ্ঞাপন আমার বন্ধু'র দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো হতো একটা শ্যাম বর্ণের মেয়ে 'ফেয়ার এন্ড লাভলী' ব্যাবহার করছে এবং প্রতিদিন সে ফর্সা হচ্ছে এবং চৌদ্দ দিন ব্যবহারের পর সে মেয়ে শ্যাম বর্ণ হতে ফর্সা বর্ণ ধারণ করলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে এমন বলা হতো, মাত্র চৌদ্দ দিন ব্যবহারে আপনি হবেন ফর্সা ও সুন্দরী।
বিজ্ঞাপনটি ভালো ভাবে দেখে আমার বন্ধু যেন হালে পানি পেলো! ভাবলো, এবার কিছু একটা হবেই। তাকে আর আটকায় কে? পরদিনই দোকানে গিয়ে 'ফেয়ার এন্ড লাভলী'র দুটা মিনি প্যাক কিনে নিয়ে আসলো। মা বাবা, ভাইবোন সবার চোখ এড়িয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে 'ফেয়ার এন্ড লাভলী' মুখে মাখছিল আর দিনে চল্লিশ বার করে আয়নায় মুখ দেখছিল। মাঝেমধ্যে তার কাছে মনে হচ্ছিল, কই কিছুইতো হচ্ছে না; আবার মাঝেমধ্যে আয়নায় নিজেকে একটু একটু ফর্সা দেখাচ্ছিল, পুলকিত হয়ে উঠছিল আমার বন্ধু। একদিন, দু'দিন করে চৌদ্দ দিনের কোর্স শেষ হলো। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার কোন ফল এলো না, বন্ধু'র শ্যাম বর্ণ শ্যামলাই রয়ে গেল; সাদা হলো না।
দুঃখে, রাগে, ক্ষোভে বন্ধু এক টুকরো কাগজ হাতে তুলে নিল, রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে আবেগঘন একটি পত্র লিখল প্যাকেট এর গায়ে থাকা 'ফেয়ার এন্ড লাভলী'র ঠিকানায়। পত্র প্রেরণ করে বন্ধু উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো কারণ তখনকার দিনে একমাত্র বাংলাদেশ ডাক বিভাগই ভরসা; কোন কুরিয়ার সার্ভিস ছিল না। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে ফিরতি ডাক এলো। অধিক আগ্রহ নিয়ে বন্ধু খাম খুললো। ভিতরে সুন্দর করে ভাজ করা একটা কাগজ ছিল। কাগজ খোলা হলো, কাগজের ঠিক মাঝখানে গোট গোট করে মেয়েলী হাতের একটা লাইন লেখা ছিল, "দুঃখিত, আবার চেষ্টা করুণ।" ঠিক ওই মুহূর্তে বন্ধুর চেহারা কেমন হয়েছিল, তা দেখার স্বাদ আজীবনই আমার থাকবে। কারণ পুরো ঘটনার কোন অংশেরই আমি প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী নই বরং চূড়ান্ত ঘটনার দেন সাতেক পরে হতাশাগ্রস্ত বন্ধুর মুখনিঃসৃত বক্তব্য হতে পুরো ব্যাপারটা আমি জানতে পারি।
এবার আসল কথায় আসি। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন কোম্পানি তথাকথিত ফর্সা করার ক্রিমের বিজ্ঞাপন প্রচার করে আমাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। কালো কি অসুন্দর? কেন তারা তাদের ক্রিম ব্যবহার করে ফর্সা হতে উৎসাহিত করবে?? এটা কি একধরণের বর্নবাদ নয়??? তাছাড়া কোন ক্রিম ব্যবহার করে কি কোন মানব সন্তান স্থায়ীভাবে আল্লাহ প্রদত্ত গায়ের রঙ পরিবর্তন করতে পারবে???? এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয় না কেন?????
১৬ মে ২০১৯
No comments:
Post a Comment